স্কুলে মার খাওয়ার স্মৃতি

in BDCommunity3 years ago

লাস্ট দুইদিন ধরে বাসায় যে পিচ্চি মেয়েটা কাজ করে তাকে পড়াচ্ছি। ওর স্কুলের এসাইনমেন্ট দিছে কিভাবে কি করতে হবে বুঝিয়ে দিচ্ছি। প্রথমদিন গনিত আর সমাজ ছিলো। ওকে বুঝাতে যেয়ে দেখলাম অবস্থা তেমন একটা ভালো না। মনযোগ অনেক কম। সেদিন প্রায় দুই ঘন্টা ধরে অনেক বুঝিয়ে সব এসাইনমেন্ট শেষ করে দিলাম। আমার যে এতো ধৈর্য্য আগে জানতাম না। মাথা অনেক ঠান্ডা করে বুঝায় বুঝায় পড়ালাম ওকে। আর আমার ছোট বেলার কথা মনে পড়ছিলো। আমার বোন আমাকে বেশিরভাগ সময় পড়াইতো। কিছু একটা না পারলে মাইর একটাও মাটিতে পড়তো না।

![IMG_20210820_160304878~2.jpg](

বাসায় আমার প্রথম যে টিচার রাখা হলো তার নাম কালিদাস। স্যারের এলাকায় অনেক নাম ছিলো। পড়া না পারলে ছাত্রদের অনেক মারতেন স্যার। আমরা দুই ভাই ছিলাম। পড়তে চাইতাম না একদমই। তখন এলাকার কে যেনো বাবাকে খোঁজ দিলেন কালিদাস স্যারের। বাসায় কথা হলো আমাদের দুই ভাইকে কালিদাস স্যারের কাছে দিবে। পরদিন দেখি বিকেল বেলা স্যার একটা সাইকেল নিয়ে বাসায় চলে আসলো। স্যার দেখলাম খুব সুন্দর করে কথা বলেন। প্রথমদিন দেখে আমার ভালই লাগলো স্যারকে। স্যার অনেক মারেন তাকে দেখে একদমই মনে হয়নি। কিন্তু ঠিক দুইদিন যাওয়ার পরে আমার ধারণা ভুল হলো। পড়া না পারার কারনে হাতের তালুতে স্কেল দিয়ে মাইর খেলাম। হাত আমার জ্বলে শেষ হয়ে যাচ্ছিলো। তখন স্যারকে অনেক ভয় পাইতে শুরু করলাম। সেই ভয়ের ঠেলায় প্রতিদিন পড়া করতাম।কিন্তু মাঝে মাঝে পড়া না পারলে সেদিন কপাল খারাপ ছিলো। একবার বাসায় মাছি মারার জন্য প্লাস্টিকের একটা হাত আনছিলো। পরে সেটা দিয়ে আর মাছি মারা হয়নি। সব মাইর আমাকে আর আমার ভাইকে দেয়া হইতো। মাছি মারার এই হাত টা অনেকবার লুকায় রাখছিলাম আমরা। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। বাবার ভয়ে আবার বের করে দিতে হতো। প্রায় বছর খানেক পড়ছিলাম স্যারের কাছে। কিছুদিন আগে শুনি স্যার মারা গেছেন। শুনে অনেক খারাপ লাগছিলো। স্যার মারলেও আমাদের অনেক ভালোবাসতেন। স্যারের বাসায় আমাদের একবার দাওয়াত দিয়ে খাওয়াইছিলো। রাস্তায় দেখা হলে সুন্দর একটা হাসি দিয়ে কেমন আছি জিজ্ঞাসা করতেন।
স্কুলে যখন রেজাল্ট করতাম তখন বাবাকে দেখতাম কড়া করে স্যারদের বলে আসতেন হাড্ডি আমার আর মাংস আপনাদের। এই কথা শুনে আমিতো হা হয়ে বাবার দিকে তাকায় ছিলাম। স্কুলে অবশ্য তেমন একটা মাইর খাইনাই। কিন্তু বাবার এই কথাটা আমার এখনও মাঝে মাঝে মনে পরে। আমাদের সময় স্কুলে পড়া না পারলে অনেক মারতো। আর এখনকার বাচ্চাদের কিছু বলা যায় না। কত আরামে বড় হচ্ছে সবাই। আমাদের সময়টায় কোন স্যার বেশি মারতেন তার কাছেই বাবা মা পরাইতো। স্কুলের কিছু স্যার ছিলেন একবার মারা শুরু করলে বেত না ভাংগা পর্যন্ত মারতেই থাকতেন। স্কুলে আর যাই করতাম কখনো এমন কোন শয়তানি করিনাই যেনো তাদের হাতে মাইর খাই। কিন্তু ঐ যে যেটা থেকে বেশি পালাতে চাই ওটাই কপালে চলে আসে। একবার শেষ পিরিয়ডের আগের ক্লাসে স্যার আসে নাই। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে গল্প করতে করতে এতো জোরে কথা বলতেছিলাম আর হঠাৎ সবাই এমন অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছি স্যার কখন যে পিছনে এসে দারাইছে খেয়ালই করি নাই। আর সাথে সাথে সবার পাছার উপরে বেতের বারি। সেদিন আমাদের সবার পিছনে লাল করে দিছিলো। শেষের জনকে মারতে যেয়ে বেতটাই ভেংগে যায় স্যারের। এরপরে আমি আর ভুলেও কখনই ক্লাসের মধ্যে হাসিনাই।

আমাদের আর একজন স্যার ছিলেন। চুলের কারনে প্রচুর মারছে আমাকে। চুল সবসময় বড় রাখতাম। আর স্যার বড় চুল মোটেও পছন্দ করতো না। হটাৎ করে কিরে তোর চুল এতো বড় কেন? বলেই মাথা টা ধরে নিচু করে পিঠের উপরে ধাম করে একটা দিতো। অনেকে চুল কেটে না আসলে স্যার নিজের পকেট থেকে বের দিতেন। এখনও স্যারকে দেখলে অনেক ভয় লাগে। আজকে সকালেই বাজারে যেতে একবার আবার আসতে একবার স্যারের সাথে দেখা। শুধু মনে হয় এখনও বলবে কিরে চুল এতো বড় কেন বলে পিঠের উপরে একটা দিবে।

Sort:  

বেসরকারি বিদ্যালয়ে পড়ার সুবাধে সবকয়টি অভিজ্ঞতায় আছে। 😆
আমাদের একজন হুজুর ছিলেন যার ভয়ে ক্লাস শুরুর পূর্বে যত দোয়া-কালাম আছে সবই পড়তাম। কখনো ওনার ক্লাস অফ থাকলে ঈদ আসতো আমাদের মনে। তিনি একটি প্রাকৃতিক দুর্ঘটনায় মারা যান, তখন অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম।ওনার থেকে এমন মুক্তি আশা করিনি কখনো। আপনার লিখাটি পড়ে আজ আবার ওনার কথা মনে পড়ে গেল।

সব স্কুলের হুজুররাই কঠিন মারতো ভাই😆

যাহোক! সাইকেল নিয়ে টিচারদের বাড়িতে পড়াতে আসাটা একদম খুবই সুন্দর একটা দৃশ্য ! তুই আঁকিস না এখন ! কয়েকটা ছবি দিয়ে একটা পোস্ট কর ! ভাবতেছি তোর থেকে কিছু ছবি ধার করে এক্সটেনশনের উপর একটা পোস্ট লিখব! বা তুই ও লিখতে পারোস । ডিস্কর্ডে আয় ব্যাটা !

ভাই ছবিতো আঁকা ছেড়ে দিছি অনেক আগে। ক্রাফটটে ভাই আঁকাআঁকির থেকে বানানো কাজ বেশি। ডিস্কর্ডে তো পাই না ভাই আপনারে

Knocked!

Hi @amishahi, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @rehan12!


Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.

JOIN US ON

Congratulations @amishahi! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s) :

You received more than 4000 upvotes.
Your next target is to reach 4250 upvotes.

You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word STOP

Check out the last post from @hivebuzz:

Feedback from the September 1st Hive Power Up Day
Introducing the Hive Power Up Month - Let's grow every day!