আবিরের প্রথম প্রেমের গল্প -শেষ পর্ব

in BDCommunity3 years ago

IMG_20210819_165318102~2.jpg

নাজিয়াকে রিক্সায় তুলে দিয়ে আবির অপলক তাকিয়ে ছিলো। মনে হচ্ছিলো ও একেবারে চলে যাচ্ছে। রিক্সা যতক্ষন দেখা গেলো আবির একমনে তাকিয়ে থাকলো। দূরে মিলিয়ে গেলে আবির একটা রিক্সা ডেকে বাসায় চলে আসলো। বাসায় আসার পরে নাজিয়া আবিরকে মেসেজ করলো। বাসায় একা একা ওর ভালো লাগছে না। বাসে যতক্ষন ছিলো ওদের সময়টা অনেক ভালো কাটছিলো। এখন সুধু মনে হচ্ছে কবে কলেজ খুলবে আবার ওদের দেখা হবে। দুপুরে খেয়ে আবির ঘুমিয়ে পরলো। বিকালে ঘুম থেকে উঠার পরে আবির নাজিয়াকে অনেক মিস করতে থাকলো। ওকে ফোন করে ওর বাসার দিকে যাবে আবির। একটা বার দেখবে শুধু। নাজিয়াকে আবিরের একটুও চোখের আড়াল করতে ইচ্ছে করে না। যদি পারতো সবসময় চোখের সামনে রেখে দিতো। বিকালে বাবার বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়লো আবির। নাজিয়ার সাথে কথা বলে বাসা কোন দিকে জেনে নিলো। একটানে চলে গেলো আবির বাসার নিচে। সন্ধ্যা হয়ে গেছে তখন। আবির দেখতে পেলো বারান্দায় নাজিয়া দাঁড়িয়ে আছে। ফোনের আলো সামান্য মুখের উপরে পরে নাজিয়াকে দেখতে পেলো। সামান্য কয়েক সেকেন্ড দেখে আবির চলে আসলো। কিন্তু আবিরের ওখান থেকে আসতে একটুও মন চাচ্ছিলো না। যে কয়দিন বাসায় ছিলো আবির প্রতিদিন বিকালে কিংবা সন্ধ্যায় নাজিয়ার বাসার নিচে চলে আসতো ওকে একটাবার দেখার জন্য।

প্রায় সপ্তাহ খানেক বন্ধের পরে আজ কলেজ খুলছে। আবিরের অনেক ভালো লাগতেছে। এবার আর নাজিয়ার সাথে দেখা করতে ওর কষ্ট করতে হবে না। চাইলেই দেখা করতে পারবে। কলেজ শেষে প্রতিদিন ওরা কলেজ মাঠে বসে গল্প করতো। আবির একমনে নাজিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকতো। ওর কথা শুনলেই আবিরের কলিজা ঠান্ডা হয়ে যেতো। এভাবে দিন বেশ ভালোই কাটছিলো। হঠাৎ একদিন নাজিয়ার বাবা কলেজে আসলো। সেদিন আবির দেখলো নাজিয়ার অনেক মন খারাপ। বিকালে যখন ওরা দেখা করলো তখন জানতে পারলো নাজিয়াকে নিয়ে ওর বাবা পাবনা তে চলে যাবে। কলেজে আসছিলো টি.সি. নেবার ব্যাপারে। আবিরের এটা শুনে মনে হলো ও নাজিয়াকে একেবারে হারিয়ে ফেলবে। বুকের ভিতরে মনে হচ্ছে কেউ ছুরি বসিয়ে দিলো। আবিরের অনেক খারাপ লাগতে শুরু করলো। কালকে সকালেই নাজিয়া এখান থেকে বাসায় চলে যাবে। কিছুদিন পরে পাবনাতে একেবারে চলে যাবে। আবিরের পড়াশুনায় আর মন বসে না। ক্লাসে যেতে ইচ্ছে করে না। নাজিয়া বাসাতে চলে যাবার পরে আগের মত কথা বলতে পারে না। মাঝে মাঝে শুধু ওর মার মোবাইল থেকে মেসেজ দেয়। আবির এখনও কিছুই বুঝতে পারছে না কেনো ওর বাবা ওকে কলেজ থেকে নিয়ে গেলো। কিছুদিন পরে জানতে পারে নাজিয়া আসলে ওর বাবাকে না জানিয়ে ফোন ব্যাবহার করা শুরু করছিলো। আর কলেজে ফোন ব্যাবহার সম্পুর্ণ নিষিদ্ধ ছিলো। সবাই লুকিয়ে ফোন চালাতো। কিন্তু নাজিয়ার ফোন টা স্যাররা পেয়ে যায়। আর তখন তার বাবাকে জানিয়ে দেয়। এইজন্য পরের দিন ওর বাবা ওকে একেবারে নিতে চলে আসে। ওকে দাদাবাড়িতে রাখবে। ওখান থেকে পড়াশুনা করবে।

নাজিয়া প্রায় সপ্তাহখানেক পরে পাবনা তে চলে যায়। এরমধ্যে ওর সাথে আবিরের তেমন একটা যোগাযোগ হয়নি। ওখানে যাওয়ার পরে নাজিয়া ওর কাজিনের ফোন দিয়ে আবিরের সাথে যোগাযোগ করতো। এই এক সপ্তাহ আবিরের খাওয়া দাওয়া প্রায় সব বন্ধ হয়ে গেছিলো। এর কিছুদিন পরে আবির নাজিয়ার সাথে দেখা করতে পাবনা তে যায়। ওখানে যেয়েই আবির আগে কিছু গোলাপ ফুল কিনে নেয়। নাজিয়া আসলে ওকে দিবে। ওর আসতে আসতে প্রায় বিকাল হয়ে যায়। বাসা থেকে বেরতে পারছিলো না। একটা কফির দোকানে যেয়ে বসে ওরা। সাথে নাজিয়ার কাজিন ছিলো। ও কিছুখন বসে চলে যায়। আবির নাজিয়ার সাথে কথা বলতে বলতে ওর হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে। এরপরে ব্যাগ থেকে আবির গোলাপ ফুল বের করে নাজিয়াকে দেয় ও। কত্তদিন পরে ওদের দেখা হলো। প্রায় আধা ঘন্টার মত ওরা ছিলো ওখানে। নাজিয়ার আবিরকে প্রায়ই বই দিতো পরতে। এবারও দুটি বই পড়তে দিলো। নাজিয়ার সুবাদে আবিরবের অনেক বই পড়া হত। নাজিয়াকে রিক্সায় তুলে দিয়ে আবির আবার অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। কিছুখনের মধ্যেই রিক্সা চোখের আড়াল হয়ে গেলো। আবির ওখান থেকে সোজা বাস ধরতে চলে আসলো।

এভাবে প্রায়ই আবির নাজিয়ার সাথে দেখা করতে পাবনা যেতো। দেখতে দেখতে আবিরের এইচএসসি পরিক্ষা চলে আসলো। পরিক্ষার শেষের দিকে আবিরের মাথায় মনে হলো বাজ পড়লো। নাজিয়া হঠাৎ একদিন ফোন করে বলে বাবা নাকি ওর জন্য ছেলে দেখতেছে। ওর বাবার অফিসের কলিগের ছেলে। অনেক ভালো জব করে। আবিরের পরিক্ষার জন্য নাজিয়া ওকে কিছুই জানায়নি। বাসায় ও অনেক বুঝানোর চেষ্টা করছে কিন্তু কেউ কোন কথাই শুনছে না। আবির কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। ও মাত্র পরিক্ষা শেষ করলো। এই মুহুর্তে কি করবে ওর মাথা কিছুই কাজ করছে না। নাজিয়ার কাছে ফোন না থাকায় ওর সাথে সবসময় কথাও বলতে পারতো না। আবিরের চারপাশ অন্ধকার লাগে। ওর প্রথম ভালোবাসা এভাবে হারিয়ে যাবে ও কিছুতেই মেনে নিতে পারে না। আবার কিছুদিন পরে শোনে বিয়ের ডেটও ফিক্সড করে ফেলছে। নাজিয়া আবিরকে ফোন দিয়ে অনেক কান্নাকাটি করছে। আবির কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলে আসলো। নাজিয়ার সাথে আবিরের শেষ কথা হইছিলো ওর বিয়ের আগেরদিন। আবির চুপ করে ছিলো। কোন কথা বলতে পারেনাই। নাজিয়া দুই একটা কথা বলে। কিছুক্ষন পরে নাজিয়া কাঁদতে কাঁদতে ফোন টা রেখে দেয়। এরপরে আর নাজিয়ার সাথে এতো দিনেও আবিরের কথা হয়নি। কেমন আছে ও কিছুই জানে না। ওর জন্মদিনে এখনও ওকে সবসময় মিস করে। এখনও ওকে ভালোবাসে। এর পরে নয়টি বছর কেটে গেলও আবির আর কারও প্রেমে পরেনি। এখনও নাজিয়ার সেই হাসি চোখের সামনে ভেসে বেরায়।