ভাইয়ার সাথে আজকে আমাদের জমিগুলো দেখতে যাওয়ার কথা। সকালে খাওয়াদাওয়া করে বাইকে করে বের হয়ে গেলাম ভাইয়া আর আমি। মহব্বতপুর গ্রামে আমাদের বেশ কিছু জমি আছে। সেখানে যেয়ে আদিয়ারের সাথে কথা বলতে হবে। মহব্বতপুর গ্রামে যেতে আমার অনেক ভালো লাগে। এদিকটায় অনেক গাছপালা আছে আবার কিছুদূর যাবার পরে বিল শুরু হয়। বিলের ওপাশেই আবার বেড়িবাঁধ। এর আগে আব্বার সাথে প্রথম এদিকে আসছিলাম। আগে কখন আসা হয়নি। তখন দেখছিলাম এই গ্রাম কত সুন্দর। ভাইয়ার সাথে আজকে যেয়ে আদিয়ারদের সাথে কথা বললাম। কথা শেষ করে বিলের রাস্তা দিয়ে ভাইয়াকে যেতে বললাম। আজকে এদিকে দিয়ে বাসায় ফিরবো। আব্বার সাথে এদিকে দিয়ে গেছিলাম অনেক ভালো লাগছিলো।
বিলের এদিকটা দিয়ে যেতে হঠাৎ করে ভাইয়া আর আমি দেখি একটা জমিতে মেশিন দিয়ে চাষ করা হচ্ছে আর আশেপাশে প্রচুর বক জমি থেকে খাবার খাচ্ছে। বক গুলো এখানে নির্ভয়ে খাবার খাচ্ছে। মেশিনের শব্দেও ওরা কোন ভয় পাচ্ছে না। বেশ কিছুক্ষণ বক দেখে আমরা বাইকে উঠে পরলাম। বিলের পাকা রাস্তাতে উঠার পরে ভাইয়া বললো চল নদীর পাড় থেকে ঘুরে আসি। আমিও রাজি হলাম যাবার জন্য। নদী পার হয়ে ভাইয়া বললো আছরাঙ্গা দিঘীতে যাবি? প্রথমে আমি রাজি হচ্ছিলাম না। কারন দিঘীটা অনেক দূরে আর অনেক নির্জন। ভাইয়া বললো বাইক নিয়ে যাবো আর আসবো চল। ভাইয়ার এতো বলা দেখে অগত্যা রাজি হলাম যেতে। সে গল্প বলা শুরু করলো স্কুলে থাকতে তারা বন্ধুরা প্রায় সময়ই এই দিঘীতে গোসল দিতে আসতো। আমি আগে কখনো এই দিঘীতে আসিনাই শুনে অনেক অবাক হলো। একবার আমরা বন্ধুরা সবাই মিলে বর্ষাকালে সাইকেল নিয়ে আসার চেষ্টা করছিলাম। সেই সময় ক্লাস এইটে পরতাম। আমরা যখন আছরাঙ্গা দিঘীতে আসতে চাইছিলাম তার কিছুদিন আগে সেখানে তিনজন কে জবাই করে হত্যা করা হইছিলো। এইজন্য আমাদের সবার মাঝে একটা আতংকও কাজ করছিলো। এরপরেও আমরা সবাই সাহস করে দিঘীতে আসতে চাইছিলাম। এছাড়াও এই দিঘী নিয়ে আশেপাশের লোকজনের কাছে শোনা অনেক অলৌকিক কাহিনি ছিলো। যার কারনে আরও অনেক ভয় কাজ করতো। আমরা যখন দিঘীতে যাচ্ছিলাম তখন নদীর পাশে নতুন করে বাধঁ দেয়া হচ্ছিলো আর নতুন একটা ব্রিজ হচ্ছিলো। ওই ব্রিজে সাইকেল পার করতে আমাদের সবার অবস্থা খারাপ হয়ে গেছিলো। আর রাস্তায় এতো কাদা ছিল যে আমরা পরে আর যাই নাই। এরপরে আর কখনো আছরাঙ্গা যাওয়ার চেষ্টা করি নাই আমরা। কারন তখন রাস্তার যে অবস্থা ছিলো ওটা চিন্তা করলেই আমাদের যাওয়ার ইচ্ছা মরে যেতো।
আছরাঙ্গা যেতে আজ অনেক মাটির বাড়ি খেয়াল করলাম। একটা সময় আমাদের এদিকে অনেক মাটির বাড়ি ছিলো। ইদানিং আর মাটির বাড়ি চোখে পরে না। অনেকদিন পরে অনেক মাটির বাড়ি দেখলাম। আগে যখন ছোট থাকতে আম্মার নানির বাড়িতে যেতাম তখন মাটির বাড়ি অনেক চোখে পরতো। মাটির বাড়িতে থাকতে অনেক শান্তি লাগে। ঠান্ডা ঠান্ডা একটা ভাব থাকে।
প্রায় বিশ মিনিট পরে দিঘীতে চলে আসলাম। চারপাশে শুধু গাছ আর গাছ। দূর থেকে দেখে এতো অন্ধকার মনে হচ্ছিলো আমার দেখেই গা ছমছম করছিলো। দিঘীর চারপাশ গাছপালার জন্য অনেক অন্ধকার লাগে কিন্তু দিঘীতে অনেক আলো।
এই দিঘীর আয়তন প্রায় ২৫.৫০ একর। ৮১৭ খ্রিস্টাব্দে এই প্রাচিন দিঘীটি খনন করা হইছিলো। ১০৭০ ফুট দৈর্ঘ এবং ১০০০ ফুট প্রশস্ত এই দিঘি। এই দিঘী আসলে কে খনন করছে এইটা নিয়ে কেউ তেমন কিছু বলতে পারেনাই। তবে অনেকে বলেন মহারাজাদের হুকুমে রাজেন্দ্র রায় এই দিঘী খনন করেন। অনেকের মতে তাহেরপুর রাজ পরিবারের সদস্য মনু ও ভুট্ট এই দিঘী খনন করেন। যার মালিক ছিলো রাজ বংশের রাজা কংশ নারায়ণ রায়। রাজার পরিবারের গোসলের জন্য এই দিঘীর চারপাশে ৫০ ফুট করে চারটি ঘাট তৈরি করা হইছিলো যেগুলো এখনও আছে। এই দিঘী একবার খনন করার সময় অনেক মুর্তি পাওয়া গেছিলো যেগুলো অনেক জাদুঘরে আছে। আশেপাশের লোকজন এখনও মনে করে দিঘীর মাঝে অনেক মুল্যবান সম্পদ আছে যা অলৌকিক কোন শক্তি দারা নিয়ন্ত্রিত।