সারারাত ছটফটের কারনে আবিরের একটুও ঘুম হলো না। বারবার ওর শুধু নাজিয়ার কথা মনে পরছে। কথা বলার সময় আবির একমনে নাজিয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলো। ওর চোখে কি যেন একটা মায়া আছে যা আবিরের দৃষ্টি সরাতে পারছিলো না। নাজিয়া ঠোঁটের কোনায় একটা হাসি নিয়ে আবিরের সাথে কথা বলছিলো। ওর সারারাত শুধু নাজিয়ার সেই হাসি চোখে ভাসতে থাকলো। খুব ভোরে আবির বিছানা ছেড়ে উঠে পরলো। হাতমুখ ধুয়ে বই নিয়ে বসলো কিন্তু মাথার ভিতর থেকে নাজিয়ার কথা কিছুতেই যাচ্ছে না। শুধু মনে হচ্ছে কখন কলেজে যাওয়ার সময় হবে। কলেজে একটাবার ও নাজিয়াকে দেখবে। সময় কিছুতেই যেতে চাচ্ছে না। প্রতিদিন আটটার সময় আবির হোস্টেল থেকে বেরিয়ে যায় কিন্তু আজকে আধা ঘন্টা আগে বেরিয়ে পড়লো। জানে এতাও তাড়াতাড়ি কেউ কলেজে আসবে না। কিন্তু আবিরের আর রুমে বসে থাকতে ভালো লাগছে না।
কলেজে এসে আবির নাজিয়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকলো। ঠিক আটটার দিকে দেখে নাজিয়া কলেজ গেট দিয়ে ঢুকতেছে। আবির একদৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। দূর থেকে দেখতে দেখতে কাছাকাছি আসার পরে নাজিয়ার যখন খেয়াল করলো আবির ওকে দেখছে তখন অনেক লজ্জা পেয়ে গেলো। কিছুক্ষন পরে ক্লাস শুরু হয়ে গেলো। কিন্তু আবিরের মাথায় এখন ঘুরছে কখন ছুটি হবে। তখন ও নাজিয়ার সাথে কথা বলবে। ওর সেই হাসি দেখার জন্য আবিরের মনটা ছটফট করছে। আবির একটার পর পর একটা ক্লাস শেষ করে আর ভাবে কখন ছুটি হবে। ক্লাস না থাকলে বাহিরে যায় কিংবা লাইব্রেরীতে যেয়ে দেখে নাজিয়া আছে কি না। কিন্তু তখন ওর ক্লাস চলে। অনেক প্রতিক্ষার পরে কলেজ ছুটি হলো। কিন্তু আবির ওর সাথে কথা বলতে পারলো না। বিকালে কলেজে আবার সবাই কোচিংয়ে আসে। ভাবলো তাহলে তখন কথা বলবে। কোচিং শেষ করে আবির কলেজের সামনের রাস্তায় অপেক্ষা করতে থাকলো নাজিয়ার জন্য। একটু পরেই ও চলে আসলো। আজ আর আবির কোন কথা খুজে পাচ্ছে না। ও মাথা নিচু করে মাটির দিকে তাকিয়ে আছে। নাজিয়া তখন আবিরকে বলে চলুন সামনের দিকে হাটি। তখন ওরা হাটতে হাটতে নাজিয়ার হোস্টেলের সামনে আসলো। নাজিয়াকে হোস্টেল থেকে বিদায় দিয়ে আবির ওর হোস্টেলের দিকে চলে আসলো।
পরেরদিন বিকালে নাজিয়া ওর এক ফ্রেন্ডের মাধ্যমে ওর মোবাইল নাম্বার দেয়। রাতে আবিরকে কল করতে বলে। আবিরের তখন হার্টবিটতো আকাশে৷ ও নাম্বার পেয়ে গেছে। কখন ওর সাথে কথা হবে। রাত এগারোটায় আবির নাজিয়াকে মেসেজ করলো। সাথে সাথে রিপ্লাই চলে আসলো। কিছুক্ষণ পরে ওরা ফোনে কথা বলা আরম্ভ করলো। আবিরের তখনও বিশ্বাস হচ্ছে না নাজিয়ার সাথে ওর ফোনে কথা হচ্ছে। সেদিন প্রায় সারারাত ওরা কথা বললো। দুজনেই সারারাত না ঘুমিয়ে পরের দিন ক্লাস করলো। কলেজে আজ ওদের অনেকবার দেখা হলো।
আবিরের প্রিয় রঙ ছিলো কালো। নাজিয়া এটা জানার পরে পরেরদিন কালো রঙের একটা জামা পরে আসছিলো। আবির একমনে তাকিয়ে শুধু ওকে দেখছিলো। এতো সুন্দর কাউকে লাগতে পারে আবিরের কল্পনাতেও ছিলো না। আবির সত্যি সত্যিই এই মেয়ের প্রেমে পড়ে গেছে। কিছুদিন পরেই কলেজ পূজার ছুটি দিয়ে দিবে। প্রায় অনেকদিন ওদের দেখা হবে না। দু'জনার মন অনেক খারাপ। ওদের বেশ কয়েকদিন দেখা হবে না। ক্লাস চলাকালীন সময়ে প্রতিদিন দেখা হতো। বাড়িতে গেলে নাজিয়া ফোনে কথা বলতে পারবে না। লুকিয়ে লুকিয়ে কথা বলতে হবে। তবুও সেটা বলতে পারবে কি না জানে না। দেখতে দেখতে কলেজ ছুটির সময় চলে আসলো। আবির আর নাজিয়ার বাড়ি একই শহরে ছিলো। কলেজ থেকে প্রায় বারো কিলোমিটার দূরে যেয়ে বাসে উঠতে হয়। ওরা দুজন লেগুনাতে করে বাস ধরার জন্য গেলো। বাস আসার পরে ওরা একসাথে যেয়ে বসলো। কিছুখন পরে বাস ছেড়ে দিলো। আবিরের মন অনেক খারাপ হয়ে আছে। তখন হঠাৎই দেখে নাজিয়া আবিরের হাতটা চেপে ধরছে। এই প্রথম আবিরের হাত কোন মেয়ে ধরলো। নাজিয়ার হাতের স্পর্শ পেয়ে আবির প্রায় লাফ দিয়েই উঠছিলো। আবির কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। শক্ত করে নাজিয়ার হাতটা চেপে ধরে থাকলো। হাত ধরে ওরা অনেক গল্প করতে থাকলো। দেখতে দেখতে কখন সময় ফুরিয়ে গেলো ওরা টেরই পেলো না। বাস থেকে নেমে আবির নাজিয়াকে রিক্সাতে তুলে দিলো। আবির রিক্সার দিকে তাকিয়ে আছে আর নাজিয়াও পিছনে ফিরে আছে। দেখতে দেখতে নাজিয়ার রিক্সা দূরে মিলিয়ে গেলো। আর আবির অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখতে লাগলো।............(চলবে)