সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠালাম। আজকে নাটোরে যাবো দাদাবাড়ীতে। দাদা দাদি কেউই বেঁচে নেই। তাদের দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি। আমার জন্মের অনেক আগেই তারা মারা গেছেন। সকাল ন'টায় ট্রেন। বরেন্দ্র এক্সপ্রেস ধরবো। খাওয়া দাওয়া করে বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম। আমাদের বাসা থেকে স্টেশনের দূরত্ব প্রায় নয় কিলোমিটার। খুব ভোরে লোকাল ট্রেন ছিলো। লোকাল ট্রেন ধরতে হলে ভোর চারটায় ঘুম থেকে উঠতে হতো। এতো সকালে আমার পাশে বোম্ব ফাটালেও ঘুম ভাঙ্গবে না। আর বাসা থেকে স্টেশনে যেতে হলে হেটে হেটে যেতে হবে। এলাকার কুকুর গুলো অনেক ভয়ংকর। আমাদের ক্যাম্পাসের কুকুর আমার ভয় লাগে না। কিন্তু এখানকার কুকুর গুলো অনেককে কামরেও দেয়। তবে আরও একটি কারন আছে লোকাল ট্রেনে গেলে সময় অনেক লাগে। আর বেশ কয়েকবার ক্রসিং হয়। বিরক্তির শেষ পর্যায়ে নিয়ে যায়। এতোক্ষন মেজাজ ঠিক রাখা আমার পক্ষে সম্ভব না। আন্তনগর ট্রেন ধরতে একজন্য শহরে আসতে হয়।
সাড়ে আটটার মধ্যে স্টেশনে চলে আসলাম। টিকেটের লাইনে দাঁড়ালাম কিন্তু নাটোরের সিট নাম্বার নাই। রাজশাহীর টিকেট নিলে সিট পাবো। অগত্যা কি আর করার রাজশাহীর টিকিট নিলাম। ট্রেন ঠিক টাইমে চলে আসলো। ট্রেন উঠার আগে সবসময় একটা টেনশান কাজ করে জানালার পাশে সিট পাবোতো? ট্রেনে জানালার পাশের সিটে বসতে অনেক ভালো লাগে। আশেপাশের পরিবেশ সুন্দর উপভোগ করা যায়। আত্রাই পার হবার পরে আমার অনেক ভালো লাগে। দুইপাশে বিল আর মধ্যে দিয়ে ট্রেনের লাইন। দূরে দূরে ছোট্ট ছোট্ট দ্বীপের মত দেখা যায়। এখানে যারা থাকে তাদের প্রত্যেক পরিবারে একটা করে নৌকা থাকে। ছোট বেলায় যখন সবাই দাদাবাড়ীতে যেতাম তখন আলাদা একটা উত্তেজনা কাজ করতো কখন পৌছাবো। কিন্তু এখন কেনো জানি এই পরিবেশ অনেক উপভোগ করি। প্রায় দেড় ঘন্টা পরে নাটোরে আসলাম। রিক্সা নিয়ে স্টেশন থেকে মাত্র পাঁচ মিনিটের রাস্তা। বাসায় যেয়ে ফ্রেশ হয়ে ঘুম দিলাম দুপুর পর্যন্ত।
কলেজে থাকতে আমি আমার জীবনের সব থেকে বেশি ট্রেন জার্নি করছি। ভর্তির পরে প্রথমদিকে প্রায় প্রতি সপ্তাহেই বাড়িতে আসতাম। আর বাড়িতে আসতে হলে সবথেকে সহজ ছিলো ট্রেন আসা। দুইটা বছর আমি এতো পরিমানে ট্রেন জার্নি করছি যে এরপরে আমার কেনো জানি ট্রেনে উঠতে ইচ্ছা করতো না। সেই সময়টায় প্রচুর টিকেট ছাড়া জার্নি করছিলাম। টি.টি. আসলে বলতাম টাকা শেষ বাড়িতে যাচ্ছি টাকা নিতে। তখন আসলেও পকেটে টাকা থাকতো না। তবে মাঝে মাঝে না থাকলেও দিতাম না। আমি আর আমার এক বন্ধু ছিলো আজাদুল। কলেজ থেকে যেদিন প্রথমদিন বাসায় আসবো সেদিন স্টেশনে ওর সাথে পরিচয় হইছিলো। ক্লাসে ওকে দেখছিলাম কিন্তু কথা হয়নি। স্টেশনে ওর সাথে প্রথম কথা হয়। ওর বাসা নওগাঁতে সান্তাহার স্টেশনে নামবে। তখনও আমরা বরেন্দ্র ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। রাজশাহী থেকে বিকাল তিনটায় ট্রেন ছেড়ে আসে। আমরা আব্দুলপুর স্টেশন থেকে উঠবো। আব্দুলপুর স্টেশনে অনেক গুলো হোটেল আছে। এখানে সব গুলো হোটেলেই ট্রেন আসলে পুরি আর বানায়। এখানকার মত সুস্বাদু পুরি আমি আর কোথাও খাই নাই। সাথে থাকে আলু ভাজি। আমি প্রতিবার স্টেশনে আসলে এখানে পুরি খেতাম। এই স্টেশনটি জংশন ছিলো। ট্রেন এখানে অনেক সময় নিয়ে দাড়াতো। ট্রেন স্টেশনে থামা মাত্রই মানুষজন হুমড়ি খেয়ে সব হোটেল গুলোতে লাইন ধরে। এখানে নেমে মনে হয় এমন কেউ নেই যে পুরি আর আলুভাজি খায় না।
প্রায় নয় বছরেরও বেশি সময় হয়ে গেলো আব্দুলপুরের সেই পুরি খাইনা। এখনও মনে হয় যে মুখে স্বাদ লেগে আছে। এসএসসি পরিক্ষা শেষ করে রাজশাহীতে আন্টির বাসাতে যাওয়ার সময় বাবা সর্বপ্রথম এখানে এই পুরি খাওয়াইছিলো। এরপরে আমি যতবার এখানে আসছি আর একবারও মিস দেই নাই।