ডেইরী ফার্মের ভিতরে ভিতরে অনেকদিন যাওয়া হয় না। ফার্ম পার হয়ে সামনের দিকে আসলে এই জায়গা। গরুদের ঘাস লাগানো হয় এখানে। শরৎকালের এই সময় আকাশে অনেক ঘুড়ি উড়ে এখানে। সামনাসামনি আমার কখনো আকাশে একসাথে অনেক ঘুড়ি উড়া কখনই দেখা হয়নি। ক্যাম্পাসে সিনিয়র ভাই আসছিলো। ভাইয়ের সাথে বিকালে এদিকে হাটতে হাটতে চলে আসছি। এখান থেকে যতদুর চোখ যায় শুধু ফাঁকা মাঠ দেখা যায়।
ডেইরী ফার্মে প্রথম আসছিলাম বন্ধু রুবাই এর সাথে। ও একদিন আমাকে বলে সালভাদর দালির লাইভ পেইন্টিং দেখবি? আমি তো অবাক হলাম সালভাদর দালির লাইভ পেইন্টিং কিভাবে? ও তখন আমাকে ক্যাম্পাস থেকে হেটে হেটে এখানে আনছিলো। আমিতো হাটতে চাইতাম না। অনেক অলস ছিলাম সবসময় রিকশাতে চড়তে চাইতাম ক্যাম্পাস থেকে এই যায়গা অনেক দূরে ছিলো। প্রায় ত্রিশ মিনিট হাটতে হতো। আমি ডেইরি গেট দিয়ে ঢুকে সামনে তাকায় দেখি সোজা রাস্তা চলে গেছে। রুবাইকে বললাম এতোদূর আমার পক্ষে হেটে যাওয়া সম্ভব না। তখনই দেখি একটা অটো রিকশা আসতেছে। এই রিকশা সামনে কিছুদুর পর্যন্ত নিয়ে যায় ভাড়া দশ টাকা রাখে। তখন রিকশা নিয়ে বেশ কিছুদুর পথ চলে আসলাম। ডেইরী ফার্ম পার হয়ে অল্প সামনে যেতেই দেখি চারপাশ খালি জায়গা আর দেখতে আসলেই সালভাদর দালির পেইন্টিং এর মতো লাগছে। এদিকে বসে দুইজন বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে ক্যাম্পাসে চলে গেলাম। এর পরে প্রায় সময়ই আমরা এদিকে এসে আড্ডা দিতাম। মাঝে অনেকদিন এদিকে আর আসিনাই প্রায় দুই থেকে আড়াই বছরের মতো। এরপরে আমাদের মার্স্টাস পরিক্ষার সাবমিশানের সময় আমরা বিকালে এখানে চলে আসতাম আড্ডা দিতে। সারাদিন কাজের প্রেসারে থাকতে থাকতে কেউ যদি একবার বলতো চল ঘুরে আসি আর ভালো লাগতেছে না তখন সবাই কাজ ফেলে আমরা এদিকে চলে আসতাম। সবাই আড্ডা দিতাম মিনি মিলিশিয়া খেলতাম। সন্ধ্যা হয়ে আসলে ক্যাম্পাসে ব্যাক করতাম। যে যার মতো হলে চলে যেয়ে রাতে আবার ডিপার্টমেন্টে ফিরে কাজ করতাম। করোনার কারনে সবকিছু কেমন শেষ হয়ে গেছে লাগে। আবার আগের মতো এরকম সময় কাটাতে পারবো কি না কে জানে।
লাল ইটের এই হল গুলো ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য অনেক বাড়িয়ে দেয়। এটা ভাসানি হল আমার অনেক পছন্দের হল। অনেক রাত এই হলে কাটাইছি। সারারাত আড্ডা দিছি ছাদে বসে। ক্যাম্পাসে আসার পরে প্রথম প্রথম এই হলে আসা হয়নি। তখন ক্লোজ কোন বন্ধু থাকতো না এখানে। এর পরে একদিন ঝড়ের রাতে প্রথম এই হলে থাকছিলাম। সেদিন সারারাত অনেক আড্ডা দিছিলাম। প্রায় সময় রাতের দিকে নিজের হল থেকে বের হয়ে আমি আর শাওন এই হলে চলে আসতাম রমিতে রুমে। রুমে থাকতে ইচ্ছা না করলে ছাদে চলে যেতাম অথবা সিনিয়র ভাইদের রুমে যেয়ে আড্ডা দিতাম। মাঝ রাতের দিকে বটতলা চলে আসতাম মোস্তফা ভাইয়ের দোকানে। ভোর পর্যন্ত খোলা থাকতো দোকান। পরোটা, লেটকা খিচুড়ি, বার্গার, সিঙ্গারা আরও অনেক খাবার পাওয়া যেতো। মোস্তফা ভাইয়ের দোকানে রাত দুইটা কি তিনটার দিকে আসতাম আর ভোরে হলে চলে যেতাম। এই দোকানের আশেপাশে আরও বেশ কয়েকটা দোকান খোলা থাকতো কিন্তু আমি সবথেকে বেশি এই দোকানেই বসতাম। সারারাত আড্ডা গান বাজনা একটার পর একটা চা ও সিগারেট চলতেই থাকতো। এখন সবথেকে বেশি এই স্মৃতি গুলান বেশি মনে পরে। অনেকটা সময় পার করে চলে আসছি। অথচ একটা সময় মনে হতো এই সময় গুলো কখনই ফুরবে না। কিন্তু দেখতে দেখতে সময় আসলেই ফুরয়ে গেলো।
রবীন্দ্রনাথ হলের এক পাশে শান্তিনিকেতন। হলের সামনে থেকে এই ছবি তুলছি। শান্তিনিকেতন যায়গাটা আমি আগে চিনতাম না। একবার বটতলায় সবাই খাওয়া দাওয়া করে বলতেছে শান্তিনিকেতন যাবে। এতো গরম ছিলো আমার তখন হলে যেয়ে একটু বিছানায় শুয়ে থাকতে ইচ্ছা করছিলো। কিন্তু সবার জোরাজোরিতে শেষ পর্যন্ত গেছিলাম। ওখানে যেয়ে আসলে এতোই শান্তি পাইছিলাম যে একদম সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে ছিলাম। এর মধ্যে সবাই আমাকে বলতেছিলো অনেক হইছে চল এবার হলে যাই। কিন্তু তখন আর আমি হলে যেতে ইচ্ছা করছিলো না শান্তিনিকেতনে আসলেই অনেক শান্তি ছিলো। এরপরে সময় পাইলেই চলে যেতাম শান্তিনিকেতনে।
আপনার ছবিগুলো সবসময় বেশ সুন্দর হয়, তার সাথে স্মৃতিময় লিখাগুলো মিলেমিশে একাকার।😊
ধন্যবাদ আপনাকে 😊
ছবিগুলো সত্যিই খুবই অসাধারণ হয়েছে, পাশাপাশি আপনার ক্যাম্পাসের স্মৃতিগুলো অসাধারণ ছিল।
ধন্যবাদ 😊
আপনার স্মৃতিগুলো পরে আমার ও অনেক কিছু মনে পরে গেলো :)
ক্যাম্পাস জীবনের মধুর স্মৃতি আসলে কখনো ভোলা সম্ভব না।
Congratulations @amishahi! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s) :
Your next target is to reach 200 replies.
You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
Check out the last post from @hivebuzz: