সকালে ঘুম থেকে উঠে খাওয়া দাওয়া করতেই আম্মা বাজারে যাওয়ার জন্য তাড়া দিতে থাকলো। আমি খেয়েদেয়ে পাশের রুমে বসে ছিলাম আস্তে ধীরে যাবো। এর মধ্যে ফ্রেন্ড হিমু ফোন করলো বলে আছরাঙ্গা দীঘি চিনি কি না। গত সপ্তাহেই ভাইয়া আর আমি ঘুরে আসছিলাম। আমার বাজার করতে হবে ত্রিশ মিনিট সময় লাগবে বললাম। ত্রিশ মিনিট পরে ও বাইক নিয়ে আমার বাসার সামনে আসবে। তাড়াতাড়ি করে রেডি হয়ে বাজারে চলে গেলাম। অনেক কিছু নিতে হবে ত্রিশ মিনিটে কিভাবে শেষ করবো জানিনা। আজকে হাটের দিন বাজারে অনেক মানুষ। মুরগী নিতে হবে। অনেক মানুষ মুরগির দোকানে। তাড়াতাড়ি করতে গিয়েও প্রায় পনেরো মিনিট চলে গেলো শুধু মুরগি নিতেই। এদিকে আজকে জুম্মার দিন আবার আছরাঙ্গা থেকে ফিরতে হবে। সময় অনেক কম। মুরগী নিয়ে কাচাবাজার থেকে কিছু সবজি নিয়ে বাসায় চলে আসলাম। হিমুকে ত্রিশ মিনিটের কথা বললেও আমার প্রায় ঘন্টাখানেক লেগে গেলো। বাসায় বাজার রাখতেই দেখি হিমু বাসার নিচে চলে আসছে। আমি ভাবছিলাম ও মনে হয় আরও কাউকে নিয়ে আসবে। ঘুরতে যাওয়ার জন্য। কিন্তু দেখি একাই আসছে। আমাকে ফোনে বলছিলো ও নাকি হাওয়া বাতাস খেতে যাবে। এখন বললাম কি ব্যাপার একাই আসলি। তখন বলে আছরাঙ্গাতে এক ভাই থাকে উনার নাকি মাল্টার বাগান আছে দেখতে যাবে।
হিমু ওর এক বিঘার একটু বেশি জমিতে লেবুর চাষ করতেছে। কিছুদিন আগে রানিনগর থেকে ৩৬০ টা লেবুর চারা আনছে। লেবুর গাছের পাশাপাশি ও মাল্টা গাছ লাগাবে এইজন্য যাওয়া। এর আগে আমি কখনো মাল্টার বাগান দেখি নাই। আমার যাওয়ার আগ্রহ আরও বেড়ে গেলো। যাওয়ার আগে বাজার থেকে দুটো সিগারেট নিয়ে নিলাম। সকালে সিগারেট না খেলে মাথাটা কেমন ধরে থাকে। হিমুকে বললাম ভাইয়ের সামনে সিগারেট খাওয়া যাবে নাকি এদিক থেকে খেয়ে যাবো। ও নিজেও আজকে প্রথম ভাইয়ের সাথে দেখা করতে যাচ্ছে। ওর বন্ধুর বড় ভাই হয়। তাই বললো খেয়ে যাওয়াই ভালো হবে। বিলের ধারে যেয়ে দুজন সিগারেট জ্বালিয়ে দিলাম। এর মধ্যে হিমু ভাইকে ফোন দিয়ে বললো আমরা আসতেছি। আজকে জুম্মার দিন হওয়াতে ভাই একটু দ্রুত যেতে বললেন। আমরা সিগারেট শেষ করে বাইকে একটানে চলে গেলাম। পথে একজনের কাছে থেকে শুনে নিলাম ফারুক ভাইয়ের নার্সারি কোন দিকে।
পাকা রাস্তা ছেড়ে কিছুদুর যেয়ে ইটের রাস্তা। নার্সারিতে যেয়ে অবাক হয়ে গেলাম শুধু মাল্টা না অনেক রকমের গাছ আছে। আমের বিভিন্ন জাত, বাতাবিলেবু, বরই, ড্রগন ফল, আখ, লেবু আরও অনেক গাছ। পাশেই বিশাল দুইটা পুকুর। পাবদা মাছ আর একটাতে পোনা মাছ চাষ করে। আমরা বাগানে যেতেই আমাদের একটা মাল্টা কেটে খাওয়ালেন ভাই। মাল্টা এখনও পরিপক্ক হয়নি। নভেম্বরের দিকে খাওয়া যাবে। তবে এখন খেয়ে দেখলাম ভালোই মিষ্টি। পরিপক্ক হলে আরও মিষ্টি হবে বুঝা যাচ্ছে। চাইনিজ কমলার গাছ দেখলাম এগুলো নাকি এক একটা গাছ থেকে প্রায় দুই থেকে আড়াই মণ কমলা পাওয়া যায়। এখান থেকে মাল্টার চারা নিতে চাইছিলো হিমু কিন্তু সব ভালো ভালো চারা গুলো বিক্রি হয়ে গেছে। এখান থেকে পরে একটু দূরে আরও একটা মাল্টার বাগান ছিলো ওখানে গেলাম। ওখানে যেতে এতো মাটির বাড়ি দেখলাম। আসেপাশে মোটামুটি সবই মাটির বাড়ি। দার্জিলিং মাল্টার চারা দেখালেন এগুলো উনি দার্জিলিং থেকেই এনেছেন। জুম্মার দিন জন্য ভাই একটু তাড়াহুড়ো করেই দেখাচ্ছিলো। উনি অনেক আন্তরিক ছিলেন। প্রায় ঘন্টাখানেকের বেশি সময় দিলেন আমাদেরকে।
হিমু নাকি আগে কখনও আছরাঙ্গা দীঘিতে আসে নাই। আমি গত সপ্তাহে প্রথম আসছিলাম। মাল্টার বাগান দেখে হিমু আর আমি দীঘিতে চলে গেলাম। ওখানে দীঘির পাড়ে বেশ কিছুখন বসে গল্প করলাম। হিমুর মাল্টা ও লেবুর প্রজেক্ট সম্পর্কে শুনলাম। এরপরে দীঘি নিয়ে ও বললো স্কুলে থাকতে যে আমাদের আসার কথা ছিলো। তখন আমাদের দীঘিতে আসা হয়নি রাস্তা খারাপের জন্য। আর তখন এখানে তিনজন মার্ডার হয়ছিলো একটা ভয় কাজ করতেছিলো তাই আর সাহস হয়নি আমাদের। ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকায় উঠে পরলাম। বাসায় যেতে হবে দেড়ি হয়ে যাচ্ছে। এর আগের দিন আসার সময় একটা বট গাছ দেখছিলাম ওখানে একটু থামতে বলছিলাম ছবি তুলবো বলে। সব গুলো ডালপালা একদম মাটির সাথে লেগে আছে।
বিলের কাছাকাছি আসতেই হিমু কে বললাম আছরাঙ্গা দীঘি তো দেখলাম এখন মান্নার দীঘি তে যাবি নাকি। সেই স্কুলে থাকতে গেছিলাম এর পরে আর যাওয়া হয়নি। এর পরে মান্নার দীঘিতে যেয়ে আমি বাইক থেকে নেমে তখন ছবি তুলতেছিলাম নিছের দিকে তখনও দীঘি দেখি নাই। এদিকে হিমু একটু আগায় গেছিলো। আমাকে ডেকে বলে একটা সারপ্রাইজ দেখবি? কি দেখাবে জন্য কাছে যেতেই দেখি দীঘি পুরা পানি শুন্য। দীঘির মাঝে কাদাপানিতে সবাই মাছ ধরছে। দীঘি যে পানি শুন্য থাকবে এটা আমার মাথাতেই আসে নাই। ওখানে আর বেশিখন থাকলাম না। হতাশ হয়ে বাসার দিকে চলে আসলাম।