বর্ষাকাল আমার একটানা কখনোই ভালো লাগে না। সবকিছু স্যাঁতসেঁতে হয়ে থাকে। রাস্তাঘাটে কাদা অনেক বিরক্তিকর লাগে। ঝুম বৃষ্টি অনেক ভালো লাগে কিছুক্ষণ হয়েই শেষ। ঝুম বৃষ্টির মধ্যে লেকের দিকে তাকায় থাকতে অনেক ভালো লাগে। এই ছবি বৃষ্টি শেষের কিছুক্ষণ পরে তোলা। বাসা থেকে বের হয়ে হাটতে হাটতে ট্রান্সপোর্ট চলে আসলাম। ঝুম বৃষ্টির পরে হালকা রোদ উঠলে চারপাশ অনেক ঝলমলে লাগে। এখানটায় বসে থাকতে অনেক ভালো লাগে। কিন্তু এখন বৃষ্টির জন্য নিচে বসা যায় না। দাঁড়ায় থেকে সব উপভোগ করতে হয়। তবে ট্রান্সপোর্ট এর পিছনের দৃশ্য অনেক উপভোগ্য হলেও এখানে মাটি থাকায় কাদাকাদা হয়ে থাকে এটা অনেক বিরক্তিকর লাগে।
খালেদা জিয়া হলের সামনে এই রোড কৃষ্ণচূড়ার সময় লাল গালিচা হয়ে থাকে। খুব ভোরে এদিকে আসলে পুরা রাস্তা লাল হয়ে থাকে। সামনের উঁচু ঢালের কারনে এই রোড আরও বেশি সুন্দর লাগে। ভোরের দিকে এদিকে আসলে এই রাস্তার আসল সৌন্দর্য বুঝা যায়। রাস্তার শুরুতে কাঠগোলাপ পরে থাকে আর সামনে কৃষ্ণচূড়া। তবে খুব বেশিক্ষন লাল গালিচা হয়ে থাকে না। লোকজনের যাতায়াতের কারনে ফুল গুলো মরে যায়।
লন্ডন ব্রিজের পাশে এই লেক। লেকের পাশেই আমাদের ডিপার্টমেন্ট। শীতকাল আসলে এই লেক পরিষ্কার করা হয়। তখন অতিথি পাখি আশে এজন্য। অন্যান্য সময় লেকজুড়ে কচুরিপানা দিয়ে ভর্তি থাকে। ক্যাম্পাসে ভর্তির পরে থেকে এখন পর্যন্ত লন্ডন ব্রিজে বসে অনেক আড্ডা দিয়েছি। এখান থেকে লেকের ভিউ অসাধারণ লাগে। আবার ডিপার্টমেন্টের নতুন জায়গা দেবার কারনে ওপাশে থেকে লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। ক্যাম্পাসে প্রথম অবস্থায় যখন ঢাকা থেকে ক্লাস করতাম তখন লন্ডন ব্রিজের এখান থেকে বাসে উঠতাম। বাসে সিট রেখে ব্রিজে পাশে বসার জায়গা আছে ওখানে বন্ধুরা বসে আড্ডা দিতাম। সেই সময় গুলো অনেক মজার ছিলো। ক্লাস থেকে আগে আগে আসতে হতো নয়তো বাসে সিট পাওয়া যেতো না। আমি আগে আসতে না পারলে অন্য কাউকে বলে দিতাম সিট রাখার জন্য। তবে বাসে সিট রাখা হলেও শেষ পর্যন্ত আমরা বন্ধুরা বাসের গেটে ঝুলতে ঝুলতে যেতাম। সিটে আর বসতে ইচ্ছা করতো না। গেটের কাছে দাড়ায় যেতে আলাদা একটা মজা পাওয়া যেতো।
ডিপার্টমেন্টের পাশে হবার কারনে সবথেকে বেশি সময় কাটানো হইছে এই লেকের পাশে। ক্লাসের ফাকে চা সিগারেট খেতে এসে লেকের ধারে বসে থাকতাম। আসেপাসে অনেকেই বসে থাকতো। এই লেকের ধারে বসে অপর পাশে তাকায় থাকতে অনেক ভালো লাগতো। ক্লাস শেষ করে এই লেকের ধারে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকছি। আমি আর শাওন সবথেকে বেশি বসতাম এদিকটায়। এই লেকে বেশ কয়েকবার নৌকায় চরার অভিজ্ঞতা হইছে। মাছকে খাবার দেবার জন্য নৌকা রাখা হইছিলো। একবার বেশ ভয় পাইছিলাম। সেদিন আমার কলেজ ফ্রেন্ড ওর অফিসের এক কলিগকে নিয়ে ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসছে। সন্ধ্যার দিকে তখন আমি আর কয়েকজন নৌকাতে করে লেকে ছিলাম। ওকে লেকের একপাশে ধারে আসতে বললাম। ও সাইজে একটু বড় ছিলো। এর পরে দেখি আমাদের আরও বেশ কয়েকজন বন্ধু আসলো। ওরাও নৌকাতে চড়বে। সবাই উঠার পরে দেখি নৌকাতে খুব দ্রুত পানি উঠতেছে। তারাতাড়ি করে নৌকা থেকে নেমে যাই। এর আগে একবার ছোট একটা নৌকা ছিলো ঐ নৌকাতে আমি আর সিনিয়র এক ভাই ও আপু উঠছিলাম। দুইজন উঠার জন্য নৌকাটা পারফেক্ট ছিলো। কিন্তু তিনজনের জন্য একটু রিস্কি ছিলো। নৌকা লেকের মাঝামাঝি আসার পরে আপুকে ভয় দেখানোর জন্য আমি আর ভাই নৌকা দুলাতে থাকি। এদিকে শুধু আমি সাতার পারি। যদি কোন একটা অঘটন ঘটে যায় তাহলে শেষ। কিন্তু তখন এইসব মাথায় ছিলো না। মাথায় ছিলো আপুকে ভয় দেখাতে হবে। এর পরের দিন দেখি দুই পিচ্চি নৌকা নিয়ে লেকের মাঝে গিয়ে এরকম দুলতে দুলতে নৌকা উল্টায় গেলো। ওরা আবার নৌকা ঠিক ও করলো। তখন আমার মাথায় আসলো আল্লাহ নিজ হাতে আমাদের গতকাল বাচাইছে। এরকম হলে অনেক বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো। এরপর থেকে আমি নৌকাতে উঠলে আর কখনো এমন করিনাই।
আল বেরুনি হলের পাশে এই লেক কচুরিপানা ছাড়া খুব কম সময় দেখছি। এই লেকে একবার এক ভাই কে দেখি মাছের ঝাকে ট্যাডা দিয়ে বেশ কয়েকটা মাছ একসাথে তুলতে। লেকের ওপাশে একবার একটা মাচা বানাছিলো। তখন ক্লাস শেষ করে হলে যাবার আগে মাচাতে বেশ কিছুখন বসে যেতাম। স্কুল জিবনে এরকম মাছ পাহারা দেবার মাচাতে বসছিলাম। এর পরে ক্যাম্পাসে এখানে বসছিলাম। কিন্তু কিছুদিন পরেই দেখি মাচাটা ভেংগে ফেলে। এর পরে আর ওদিকটায় যেতাম না।