আক্কেলপুর রেলগেটের ইতিকথা

in BDCommunity3 years ago

IMG_20210811_134847903~2.jpg

বাড়িতে আসার পরে বাবার পেনশানের কাজে বেশ কয়েকবার ইউ এন ও অফিসে যেতে হইছে। আমাদের থানার নাম আক্কেলপুর। এবার অনেকদিন পরে এদিকে এসে খেয়াল করলাম মহিলা কলেজের কাছে যে রেলগেট এখানে এখানে আগে কোন গেট ছিলো না। এই গেটে আগে বেশ কয়েকবার দূর্ঘটনা ঘটছে। তারপরেও কোন রেলাগেট করা হয়নি। ২০০৬ সালে একবার ট্রেনের সাথে বাসের ধাক্কায় প্রায় ৩৫ জনের মত মারা যায়। সাথে আহতও অনেক হইছিলো। আগে এদিকে লোকাল বাস গুলোতে প্রচুর যাত্রি উঠানো হতো। বাসের গেটে পর্যন্ত লোক ঝুলতো। দূর্ঘটনার সেই দিন আব্বা আর আপু নাটোর থেকে ট্রেনে এসে আক্কেলপুরে নামছিলো। ইন্টারসিটি ট্রেনে আসলে আক্কেলপুরে নামতে হতো। আমাদের গ্রামে তখন ইন্টারসিটি ট্রেন দাড়াতো না। আব্বা আর আপু বাসস্ট্যান্ডে এসে বাসের জন্য ওয়েট করতেছিলো। তখন পাশেই এক ভ্যানওয়ালা বলতেছিলো কাকা ভ্যানে চলেন এখনও কোন খ্যাপ পায়নি। আব্বা তখন বাসে ভীড়ে যাওয়ার কথা চিন্তা করে ভ্যানে উঠে পরে। রেলগেট পার হয়ে প্রায় কিলোখানেক আসার পরে বিকট জোরে একটা আওয়াজ পায়। মনে করছিলো হয়তো কোন ট্রাকের চাকা ব্রাস্ট হইছে। বাসায় আসতেই নাটোরে থেকে চাচাতো ভাই আব্বাকে ফোন করলো ঠিক ভাবে বাসায় আসছে কি না। টিভিতে খবর দেখে ফোন করছে। তখন আমরা টিভি চালু করে দেখি আক্কেলপুর রেলগেটে বাস দূর্ঘটনা ঘটছে। ট্রেন এসে বাস কে ধাক্কা মারছে ওখানেই প্রায় ৩৫ জনের মতো মানুষ মারা যায়। আরও প্রায় চল্লিশ জনের মত আহত। ছোট্ট একটা লোকাল বাসে এতজন যাত্রী অনেক বেশি। এতো বড় একটা দূর্ঘটনা আমাদের পাশেই হইছে আমার বিশ্বাস হচ্ছিলো না। আগে শুধু খবরের কাগজে পড়তাম অমুক জায়গায় বাস দূর্ঘটনায় এতোজন নিহত। প্রচন্ড রকমের খারাপ লাগতেছিলো। সব গুলো চ্যানেলে এই খবর চলতেছিলো। পরেরদিন সকালে খবরের কাগজে বড় করে লিখা ছিলো আক্কেলপুরের এই খবর। সব থেকে বেশি খারাপ লাগছিলো ছোট্ট একটা বাচ্চার বাবা মা দুজনেই মারা গেছিলো। বেশ কয়েকদিন ধরে খবরের কাগজে এই নিউজ ঘুরতেছিলো। সব গুলো নিউজ পরতাম। অনেক খারাপ লাগতো এইসব নিউজ পরে। আমাদের পাশের গ্রামের একজন বয়স্ক লোকও মারা গেছিলেন। স্কুলেও যখন যেতাম সবাই এই দূর্ঘটনার কথা বলতো। ভ্যানে করে বাসায় যাচ্ছি স্কুল শেষে ভ্যানেও এই কথা বলতেছে সবাই। মাথার ভিতরে এই খবরটাই ঘুরতো। খবরের কাগজে অনেকের ছবি দিছিলো মানুষের লাশের। আর আমার মাথায় শুধু ওই ছোট্ট বাচ্চাটার কথা ভাসতো। তখন আমিও অনেক ছোট ছিলাম ক্লাস সিক্সে পড়তাম। নিজের কথা মাথায় আসতো। এই দূর্ঘটনার আগেও অনেক ছোটখাটো দূর্ঘটনা ঘটতো। রেলগেট করার জন্য কতৃপক্ষকে অনেকবার জানানো হলেও গেট করার দিকে কারই নজর ছিলো না। এভাবেই চলতেছিলো। কিন্তু সবথেকে আশ্চর্যের বিষয় হলো এই দূর্ঘটনার পরেও ওখানে গেট করা হয়নি। লোক রাখা হইছিলো সে রাস্তা দিয়ে যতো গাড়ি যেতো সব গাড়িগুলোকে ইশারা দিতো ট্রেন আসছে কি না।

IMG_20210811_134830506~2.jpg

এরপর থেকে যতোবার আমি আক্কেলপুর গেছি রেলগেটের আসলে আমার ওই দূর্ঘটনার কথা মনে পরে। ট্রেনে করে যখন কোথাও যেতাম বারবার মনে পরতো। জানালা দিয়ে তাকায় দেখতাম না শুধু মনে হতো দেখলেই মনে হয় দেখব রাস্তার পাশে আবার কোন বাস পরে থাকতে দেখবো। বাহিরে কখনোই তাকাতে পারতাম না। এস.এস.সি পরিক্ষার আমি প্রথম বাড়ি থেকে বের হই। নাটোরে কলেজে ভর্তি হইছিলাম তখন রেগুলার ট্রেনে যাওয়া আসা করতাম। সকালের ট্রেন ধরতে হলে জয়পুরহাটে যেতাম। যদি বেশি দেরি হয়ে যেতো তাহলে আক্কেলপুরে চলে যেতাম। আমাদের বাড়ি শহর আর উপজেলার একদম মাঝামাঝি যেকোনো একদিকে গেলেই হতো।
এতোদিন পরে এসে এখানে রেলগেট দেখে অনেক ভালো লাগলো। অবশেষে কতৃপক্ষের টনক নড়লো। এই গেটে অনেকের জীবন ঝরে গেছে আর কারও যেনো না যায়।