প্রকৃতির ছবি তুলতে আমার অনেক ভালো লাগে। আজকে বেশ কয়েকদিন পর রোদ উঠছে। এই কয়েকদিন আকাশ অনেক মেঘলা ছিলো। মেঘলা আকাশের থেকে ঝলমলে রৌদ্রজ্জল আকাশ আমার অনেক ভালো লাগে। শরৎকালে আকাশ একদম ছবির মত সুন্দর লাগে। আজকে ঘুম থেকে উঠার পরে এরকম ঝলমলে আকাশ দেখে মনটা অনেক ভালো হয়ে গেলো। কিন্তু সারাদিন এতো গরম যে অস্থির হয়ে গেছিলাম। সকালে খাওয়াদাওয়া করে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে জমির দিকে গেলাম ছবি তুলতে। এইখানে আগে দুইটা পুকুর ছিলো মাঝের বাঁধ টা তুলে দিয়ে একটা করা হইছে। ছোট মাছের পোনা চাষ করা হয় এইটাতে। এপাশেই একটা বড় পুকুর আছে পরে এখানে পার করে দেয়া হয়। একবার এই পুকুরে একটা বিদেশি মাগুর ছেড়ে দেয়া হইছিলো। সেবার পুকুরে কোন পোনামাছ পাওয়া যায়নি। আমার নানা একবার এই পুকুরে মাছ ধরা জাল নিয়ে নামছিলো দেখার জন্য কি হইছে আসলে। কারন সে জানতো না এখানে বিদেশি মাগুর ছাড়া হইছিলো। জাল ফেলার পরে সেই মাগুর মাছ ধরা পড়ছিলো। প্রায় চার ফুটের মত বড় হইছিলো মাছটা। তখন আমার দেখা সবথেকে বড় মাছ ছিলো এটা। বাড়িতে সেদিন উৎসব ছিলো এতো বড় মাছ ধরা পড়ছে। মাছের মাথাটা আমি খাওয়ার জন্য নিছিলাম। এতো বড় ছিলো যে আমার প্লেটে ধরতেছিলো না। পরে অবশ্য আমি আর শেষ করতে পারিনাই। আপুকে দিয়ে দিছিলাম।
এইটা বড় পুকুর। এখানেই পোনামাছ একটু বড় হলে ছেড়ে দেয়া হতো। এই পুকুরে ছোট বেলায় আমি সাঁতার শিখছিলাম। আব্বা আমাকে আর আমার মেজো ভাইকে ধরে ধরে সাঁতার শিখাইছিলো। এখানেই প্রথম আমি বরশি দিয়ে মাছ ধরছিলাম। আমার কপাল ছিলো সবথেকে বেশি খারাপ।আমার বরশিতে সবসময় মাছ কম ধরতো। আমার খালতো বোনের মাছ ধরার কপাল অনেক ভালো ছিলো। তখন আমি ছোট ছিলাম অনেক। ক্লাস থ্রি তে পরতাম। সে আমাকে একবার দেখাচ্ছিলো কিভাবে বরশি ধরতে হয়। কোন প্রকার খাবার না দিয়ে খালি বরশি দিয়ে পুকুরে ফেলছে আর তুলে দেখে সাথে একটা মাছও উঠে আসছে। আমি আপুকে খুব কম সময় দেখছি যে সে পুকুরে বরশি ফেলে মাছ তোলেনাই। সবসময়ই তার বরশিতে মাছ বাধঁতো। ছোট থাকতে প্রায়ই ভোরে ঘুম থেকে উঠে পুকুরে আসতাম। জেলেরা পুকুরে মাছ ধরতে আসতো। আমি একটা বালতি নিয়ে যেতাম মাছ নেবার জন্য।
এইখানটায় আগে নার্সারি ছিলো। হর্টিকালচারের একজন স্টাফ নানার কাছে থেকে এই জায়গাটা নিয়ে নার্সারি করছিলো। পরে উনার বদলি হবার কারনে তিনি সব গাছ বিক্রি করে দিয়ে চলে যান এখান থেকে। প্রায় তিন বছরের মত সময় তিনি ছিলেন এখানে। ঐ সময়টা বাসার সামনে এতো সুন্দর লাগতো। বিভিন্ন রকমের ফুলের গাছ ছিলো। আমি আংকেলের কাছে থেকে অনেক গাছ নিয়ে বাসার ছাদে সুন্দর বাগান করছিলাম। প্রায় অনেকদিন পরে শুনি আংকেল মারা গেছেন। শুনে অনেক খারাপ লাগছিলো। এখনও আংকেলের লাগানো অনেক গাছ আছে এখানে।
বাহিরে কিছুক্ষণ থেকে বাসায় চলে আসলাম। বাতাসের ছিটেফোঁটাও নাই গরমে থাকা যাচ্ছে না। বাসায় ঢোকার সাথেসাথে শুনি যে ভাবির বাসায় যেতে হবে। এই গরমের ভিতরে আমার মোটেও যেতে ইচ্ছা করছে না। ভ্যানে করে যেতে হয় প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে। ভ্যানে করে যাবার সময় একটু ঠান্ডা বাতাস লাগছিলো। ভ্যানে করে যেতে যেতে বেশ কিছু ছবি তুললাম।
স্কুলে থাকতে প্রায় সময়ই এদিকে আসতাম। এদিকে দিয়ে পাহাড়পুরে যাওয়া যায়। সাইকেল নিয়ে বন্ধুরা চলে আসতাম। তখন আশেপাশের পরিবেশ এতো ভালো লাগতো না। হয়তো বুঝতাম না কিন্তু এখন চারিপাশ দেখলে চোখ জুড়ায় যায়।