সোমপুর বিহার- পাহাড়পুর

in BDCommunity3 years ago

IMG_20210617_181548636_2.jpg

সোমপুর বিহার যার নাম ছোট থেকে পাহাড়পুর জানি। হাইস্কুলে উঠার পরে জানতে পারলাম পাহাড়পুরের আসল নাম সোমপুর বিহার। পাল আমলে এই এলাকার নাম সোমপুর ছিল সেই নামানুসারেই নামকরণ করা হয় সোমপুর বিহার। এই পাহাড়পুরের সাথে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে।আমার শৈশবের অনেকটা সময় কাটিয়েছি। আমার বাড়ি থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দুরে। স্কুল শেষ করে মাঝে মাঝেই সাইকেল নিয়ে চলে যেতাম। পাশেই বন্ধুর বাড়ি। সেখানে সাইকেল রেখে ভিতরে ঢুকতাম। এলাকার পরিচয় দিলে টিকেট লাগতো না। বন্ধুরা সবাই চারিপাশ ঘুরতাম আবার কোথাও বসে আড্ডা দিতাম। তবে সন্ধ্যার আগে বাড়ি ফিরতে হতো নয়তো একটা মাইরও মাটিতে পড়তো না।

IMG_20210617_182452977_2.jpg

IMG_20210617_182833008_2.jpg

মাঝে মাঝেই পাহাড়পুরে যাওয়ার ফলে আস্তে আস্তে এর ইতিহাস সম্পর্কে জানা শুরু করলাম। পাল রাজা ধর্মপাল অষ্টম শতকের শেষের দিকে সোমপুর বিহার নির্মাণ করেন। এই বিহার ছিলো বৌদ্ধদের সবচেয়ে বড় বিহার। এটি প্রায় ৩০০ বছর ধরে বৌদ্ধদের ধর্মচর্চা কেন্দ্র ছিলো। চিন, তিব্বত, মায়ানমার, মালয়েশিয়া, ইন্দনেশিয়া প্রভৃতি দেশের বৌদ্ধরা এখানে ধর্মজ্ঞান ও ধর্মচর্চা করতে আসতেন। আমার শুধু আফসোস হতো ইস যদি এখনও এই বিহার চালু থাকতো তাহলে এতদিনে এটি হয়তো পৃথিবীর সব থেকে প্রাচীন বৌদ্ধবিহার হিসেবে থাকতো।

IMG_20210617_181634480_2.jpg

প্রথম যখন আমি পাহাড়পুরে এসেছিলাম তখন আমার বয়স ছিলো পাঁচ কি ছয় বছর। সেই সময় পাহাড়ের চূড়ায় উঠা যেতো। এর কয়েক বছর পরেই চূড়ায় উঠা বন্ধ করে দেয়। সিঁড়ি সব ভেঙ্গে দেয়া হয়েছিলো। তখন আমার অনেক মন খারাপ হয়ে যায়। চূড়ায় আর উঠতে পারলাম না। এরপরেও মাঝে মাঝে অনেক মানুষ গার্ডের চোখ ফাঁকি দিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় উঠে যেতো। দূর থেকে তখন গার্ডরা বাঁশী বাজাতে শুরু করতো। লোকজনের এরকম মাঝে মাঝেই পাহাড়ের চূড়ায় উঠা দেখতাম। তখন নিজের ও অনেক উঠতে মন চাইতো কিন্তু ভয় করতো। ছোট ছিলাম যদি উপর থেকে পরে যাই কি হবে। পাহাড়ের চূড়া থেকে নিচে পর্যন্ত গভীর গর্ত ছিলো। তবে ওই গর্ত নাকি ইট দিয়ে ভরাট করে ফেলা হয়েছে। পাহাড়পুরের আশেপাশে বন্ধুদের কাছে এখানে নানান রকমের ভূতের গল্প শুনতাম। ছোট ছিলাম মনের ভিতরে তখন নানারকম কল্পনা আসতো। এইজন্য ভয়টা বেশি কাজ করতো।

IMG_20210617_182636577_2.jpg

পাহাড়ের গায়ে এরকম অসংখ্য টেরাকোটা রয়েছে। তবে শুনেছি এই টেরাকোটা গুলো তুলে এখানে পরবর্তীতে নতুন করে টেরাকোটা লাগানো হইছে। ছোটবেলায় ঘুরে ঘুরে সব গুলো টেরাকোটা দেখতাম। আগে নাকি মানুষ এগুলো চুরি করে নিয়ে যেতো। নিরাপত্তা কড়া করার কারনে এখন আর করতে পারে না।

IMG_20210617_182745279_2.jpg

IMG_20210617_182657175_2.jpg

আগে বাড়িতে মেহমান আসলে বিকালের দিকে পাহাড়পুরে ঘুরতে যাওয়া হতো। আশেপাশের মানুষের ঘুরতে যাওয়ার একটাই জায়গা। স্কুল পাশ করে কলেজে উঠার পরে দুই ঈদ ছাড়া আর পাহাড়পুরে আসা হতো না। এবার প্রায় ৪-৫ বছর পরে গেলাম। করোনার কারনে ভিতরে ঢুকতে দিবে না। এলাকাতেই বাসা পরিচয় দেয়ার পরে ঢুকতে দিলো। ভিতরে যেয়ে দেখি হাতে গোনা ১০-১২ মানুষ ভিতরে আছে। আশেপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশ এতো সুন্দর দেখেই মন ভালো হয়ে গেলো। বিকালের রোদ পরে পাহাড় একদম লাল রঙ ধারন করে ছিলো। আগের পাহাড়পুরের সাথে এখনকার পাহাড়পুরের কোন মিল নেই। সন্ধ্যার আগে দিয়ে বাসার দিকে চলে আসলাম।

Sort:  

You captured some really wonderful photos.

Thank you😊

Your content has been voted as a part of Encouragement program. Keep up the good work!

Use Ecency daily to boost your growth on platform!

Support Ecency
Vote for Proposal
Delegate HP and earn more