অদৃশ্য মেয়ে

in BDCommunity3 years ago

অদৃশ্য মেয়ে

woman-6174830_960_720.jpg
Image score

মানুষ জীবনে চলার পথে অনেক কিছুই দেখেন। কেউ ভালো কিছু আবার কেউ খারাপ কিছু। কেউ কেউ ভয়ানক কিছু। কারো কারো জন্য এসব বিষয় হয়ে উঠে হাস্যকর আবার কারো জীবনে নেমে আসে দুঃখের আসর। আমার কি হয়েছিল আমি জানি না সবকিছু স্বাভাবিক ছিল বা এখনো স্বাভাবিক আছে। তবে মনের এক কোনে এখনো এক ঝাঁক মায়া রয়ে গেছে তার জন্য।

ঘটনাটা বেশ কিছুদিন আগের। যখন আমি আমার গ্রামে থাকি। গ্রাম থেকে আমাদের বাজার প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে। গ্রামের মেঠো পথ দিয়ে মানুষজন হেটে হেটে গিয়ে বাজার সদাই করতো। আমি প্রতিদিন বিকেলে বাজারে গিয়ে স্কুলের বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতাম রাত প্রায় ৯ - ১০ টা পর্যন্ত। কারণ আমার একটি সাইকেল ছিল। যদিও বাবার চালানো সাইকেলটা অনেক পুরাতন হয়ে গেছে। তবুও আমার জন্য এই সাইকেল টায় ছিল আমার সঙ্গী। আমি বাজার থেকে আসার পথে ঘরের জন্য প্রয়োজনীয় বাজার সদাই করে নিয়ে আসতাম।

গ্রাম থেকে বাজারে যাওয়ার পথে একটি ছোট্ট খাল আছে আর খাল পার হওয়ার জন্য ছোট্ট একটা ব্রিজ। যেমন টা আমি সব জায়গায় সবার গ্রামেই দেখি। এক সময় এই ব্রিজের মধ্যে চাঁদনী রাতে বসে অনেক আড্ডা দিয়েছি। ব্রিজের একপাশে ধানের জমিন অন্যপাশে বিশাল বড়বড় কাঠ গাছের বাগান। গাছ গুলো বেশ পুরোনো। প্রতিদিন এই পথ দিয়ে যাতায়াত করতে করতে আমার ভিতরে কোনো ভয় কাজ করতো না। যদিও রাতের আঁধারে এই রাস্তা হয়ে যাই কুটকুটে অন্ধকার। আমার কাছে ছোট্ট একটা আলো আছে যে আলো গ্যাসলাইটের পিছনে থেকে বেরিয়ে কিছুটা জায়গা আলোকিত করে।

এভাবেই একদিন আমি রাত সাড়ে নয়টার দিক বাড়ি ফিরছিলাম। সেই ব্রিজে উঠতেই একটা কান্নার আওয়াজ আমার কানে ভেসে আসে। তখনি আমার চোখ পড়লো সেই কাঠ বাগানের দিকে। আর ঠিক তখনি কান্নার শব্দ বন্ধ হয়ে গেলো। আর আমার দিকে কেউ একজন অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। অন্ধকারে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম আমি তাকে। যেন সে এখনই বিয়ের পিঁড়ি থেকে উঠে পালিয়ে এসে এখানে বসে আছে। আমি কোনো কথা না বলে সাইকেল পেরে চলে আসলাম।

ঘরে এসে কেন যেন আমার ঘুম আসছিলো না মনে হচ্ছিলো মেয়েটা কোনো একটা বিপদের সম্মুখীন হয়েছে আমার তাকে সাহায্য করার প্রয়োজন ছিল। পরের দিন সকালে সেখানে গেলে আমি আর তাকে দেখতে পাই না। বিকেল পার হতেই আমি প্রতিদিনের মতো চলে যায় হাটে। আজও বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে বাড়িতে ফিরছিলাম রাত নয়টার দিকে। আজ একই জায়গায় একই কাপড় পরে বসে ছিল মেয়েটি। দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছে মেয়েটির শরীর থেকে আলো বেরিয়ে আসছে। টকটকে লাল বেনারসি ও সারাশরীরে গয়না দিয়ে সাজানো।

কি মায়াবী চেহেরা তার। সব কিছু দেখে আজ আমি একটু ভয় পাচ্ছি , আমি কি মেয়েটার সাথে কথা বলবো নাকি চলে যাবো বুঝতে পারছিলাম না। সাইকেল থেকে নেমে হাটছিলাম আর তাকিয়ে ছিলাম সেই রূপবতীর দিকে আর সেও তাকিয়ে রইলো আমার দিকে অবাক এক দৃষ্টি নিয়ে। কি যেন বলতে চাই সে আমাকে। কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারছে না। কি এক মায়া সেই চেহেরার দিকে যেন সে তার দু চোখ দিয়ে তার দিকে টানছে আমাকে।

কিন্তু মনের মধ্যে সাহস জোগাত পারিনি আমি। আজও ব্যর্থ হয়ে চলে গেলাম আমি। সারারাত তাকে নিয়ে ভাবছি শুধু আমি। কি যেন হয়েছে আমার কিছুই বুঝতে পারছিনা আমি। পরের দিন আমি আর বাজারে যায়নি। ঘড়ির কাটা দশটা বাজতে চলেছে। আমার মধ্যে কেমন জানি এক অস্থিরতা কাজ করছে। কেন জানি ইচ্ছা করছে তার কাছে ছুটে যেতে। মনের অজান্তেই আমি সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে গেলাম সেই মায়াবী চেহারাটা দেখার জন্য। কেন জানি মনে হচ্ছিলো সে অপেক্ষা করছে আমার জন্য। সাইকেল চেপে আমি সেই ব্রিজের উপর গিয়ে থামলাম। আজ সে কাঁদছে না বরং আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়েছে।

দূর থেকে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষন সেই মায়াবী চেহেরাটার দিকে। সে যেন এক অদৃশ্য শক্তি দিয়ে তার কাছে ডাকছে আমাকে। আমি আস্তে আস্তে এগুতে থাকি তার দিকে। তার চারদিকে গোল বৃত্তের মতো আলো ছড়িয়ে আছে। আগাতে আগাতে যখন আমি তার সেই আলোর বৃত্তের ভিতরে গেলাম ঠিক তখনি সে অদৃশ্য হয়ে গেলো। আসে পাশে কেমন যেন অমাবস্যার রাতের মতো অন্ধকার হয়ে গিয়েছে। তখন আমি একা পুরোই একা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম সেই কাঠ বাগানের নিচে।

হটাৎ করে আমি এত অন্ধকার দেখে প্রচন্ড ভয় পেয়ে যাই। আজ হাতে থাকা সেই ছোট্ট গ্যাসলাইটের আলোটিও নেয়। অন্ধকারে সাইকেল ফেলে দিয়ে প্রানপনে দৌড়াতে থাকি আমি বাড়ির দিকে। জানি না কি ভাবে যেন এসে পৌঁছেছিলাম আমি আমার গন্তব্যে। পরের দিন আমি খোঁজ নিয়ে সেই কাঠ বাগানের মালিকের কাছে যাই ও ঘটনা খুলে বলি। তখন সেই কাঠ বাগানের মালিকের কাছে শুনতে পাই আমি সেই অদৃশ্য মেয়ের আসল ঘটনা।

মেয়েটি ছিল অত্যন্ত সুন্দরী ও মায়াময়ী। বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে ছিলো সে। একটা ছেলেকে সে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতো। কিন্তু তার বাবা মা তাকে জোর করে অন্য ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দিতে চেয়েছিলো। আর সেদিন মেয়েটি বিয়ের সাজ সাজানো কষ্ট সহ্য করতে না পেরে সেই কাঠ বাগানের একটি গাছের মধ্যে গলায় ফাঁস দিয়ে মারা যাই। আর তার পর থেকে এই মেয়েকে প্রায় সময় রাতের অন্ধকারে দাঁড়িয়ে কান্না করতে দেখা যাই। সে এখনো অপেক্ষা করে তার সেই ভালোবাসার মানুষটির জন্য। আর যখন কোনো যুবক ছেলে তার কাছ দিয়ে যাই তখন সে ভাবে সেই তার ভালোবাসার মানুষ। আর সেই মানুষটাকে তার অদৃশ্য শক্তি দিয়ে কাছে টেনে নেই। কাছে আনার পরে যখন দেখে এই ছেলে তার ভালোবাসার মানুষ না তখনি সে অদৃশ্য হয়ে যাই।

সেই কাঠ বাগানের মালিকের মুখ থেকে এই কথা শুনে আমার যেন সেই অদৃশ্য মেয়েটির প্রতি আরো মায়া বেড়ে যাই । সেদিনের পর থেকে আমি এখনো এই রাস্তা দিয়ে যাই কিন্তু আর কখনো তাকে দেখতে পাইনি। কারণ সে বুঝে গিয়েছে তার ভালোবাসার মানুষ আমি ছিলাম না। তাই এখন আর সে আমার সামনে আসে না। কিন্তু মায়ার টানে আমি প্রতিদিন সাইকেল থেকে নেমে সেই কাঠ বাগানের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হেটে যাই। যদি কখনো আবার তার দেখা পাই।

Thank you all for visiting my page and giving your nice support.
@aislam
Check my others social sides profile-
Facebook - https://www.facebook.com/profile.php?id=100007607950342
Instagram- https://www.instagram.com/aminul6032/?hl=en