সততা ও সহানুভূতি

in BDCommunity3 years ago

সততা ও সহানুভূতি

butterfly-4392802_960_720.webp
Image score

দুপুরের শেষ মুহূর্ত , আনুমানিক তিনটা বাজতে চলেছে। আমি তখন এলাকার একটি লোকাল হোটেলে বসে চা খাচ্ছিলাম। চায়ে চুমুক দিতে দিতে দেখলাম ২৩ - ২৪ বছরের একটি মেয়ে চারদিকে তাকাতে তাকাতে হোটেলের ভিতরে প্রবেশ করতে লাগলো। হাতে একটা প্লাস্টিকের ফাইল ভিতরে থাকা কাগজ গুলো দেখা যাচ্ছে , সার্টিফিকেট ও মার্কশিট এগুলো হবে। চেহেরার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম খুব চিন্তিত ও খুব ক্লান্ত হয়ে এই হোটেলে এসেছে খাবারের জন্য। চেহেরাটা খুব মায়াবী ও ঘামে পুরা একাকার অবস্থা।

মেয়েটি হোটেলের ভিতরে প্রবেশ করে হোটেলের লোকটিকে খুব ক্লান্ত গলায় বলতে লাগলো ভাই এখানে কি ভাত বা রুটি এমন কিছু পাওয়া যাবে ? তখন দোকানদার বললো রুটি নেই ভাত আছে। মেয়েটি আবারো বলতে লাগলো ভাতের সাথে কি আছে , উত্তরে দোকানদার বললো মাছ , মাংস , সবজি , ডাল সবই আছে , আপনি কি দিয়ে খাবেন বলেন। মেয়েটি বললো এক প্লেট ভাত আর এক বাটি ডাল কত টাকা ? দোকানদার বললো ৩০ টাকা। তাহলে আমাকে এক প্লেট ভাত আর ডাল দেন। দোকানদার বললো ঠিক আছে আপনি বসেন আমি দিচ্ছি।

এক দৃষ্টিতে আমি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে ছিলাম। তখন মেয়েটির মোবাইলে একটি কল আসে। ফোনটি রিসিভ করে বলতে লাগলো হ্যা মা বলো । আমি খেয়েছি অনেক কিছু দিয়ে , তুমি খেয়েছো তো ? মা চাকরির কথা চাকরির ইন্টারভিউর কথা জিজ্ঞাসা করতে উত্তরে বললো , হ্যা মা আমার ইন্টারভিউ অনেক ভালো হয়েছে , আমি বিকালের মধ্যে বাসায় চলে আসবো। তুমি কোনো চিন্তা করোনা। আর তুমি ওষুধ গুলো ঠিক মতো খেয়েছো তো ? এসব বলে ফোনটা রেখে দিলো। ফোনটা রেখে দিয়ে আনমনে বাহিরের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে ছিল। তখন আমি এই কথা গুলো শুনে বুঝতে পারলাম অভাবের সংসারে মায়ের অসুস্থতা। পরিবারের ভার মনে হয় এই মেয়েটির উপর পড়েছে। চাকরির ইন্টারভিউ দিয়ে ক্লান্ত মনে এই হোটেলে ডাল ভাত খেতে এসেছে। মেয়েটিকে দেখে কেমন জানি একটা শ্রদ্ধা ভাব চলে আসলো আমার মনের ভিতর। অজানা অচেনা একটি মেয়ের জন্য কেমন জানি লাগছিলো আমার। নারীর স্বাধীনতা কি মেয়েটির কাছ থেকে জানতে খুব ইচ্ছা করছিলো আমার। মনে মনে তার জন্য শুভকামনা জানালাম।

এমন সময় হোটেলে থাকা লোকটি ভাতের সাথে সবজি দিয়ে ও একবাটি ডাল দিয়ে বলতে লাগলো আপা আমি ভুলে আপনাকে সবজি দিয়ে দিয়েছি , আপনি খেয়ে নেন ,মেয়েটি বললো আপনাকে তো শুধু ভাত আর ডাল দিতে বলেছি। দোকানদার বললো আপনাকে এই সবজির টাকা দিতে হবেনা , আমি শুধু ভাত আর ডালের ৩০ টাকাই নিবো। তখন মেয়েটি খাওয়া শুরু করে। আমি পাশের টেবিলে বসে চায়ের খালি কাপ হাতে নিয়ে শুধু দেখছি আর ভাবছি। ওই হোটেলের দোকানদারের কথা শুনে আমিও ভেবেছিলাম হয়তো ভুল করেই সবজি দিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আমার ধারণাটাও ভুল ছিল।

চায়ের বিল দেয়ার সময় আমি দোকানদারকে জিজ্ঞাসা করলাম ভাই সত্যি কি ভুল করে সবজিটা দিয়েছিলেন ? দোকানদার কানের কাছে এসে বললো , সবসময় ব্যাবসায় লাভ খুঁজলে হবে ভাই। এমন কিছু ভুল করারও সুযোগ খুঁজতে হয়। সবসময় তো সেই সুযোগ হয় না। এই মেয়েটা অনেক ক্ষুধার্থ ছিল , কিন্তু টাকার কারণে শুধু ডাল ভাত খাওয়ার কথা বলেছে। বাড়িতে আমার বোনটারও বয়স ওরি মতো। আমি ওদের কষ্টটা বুঝি। এই বলে লোকটি আমার কাছ থেকে চায়ের টাকা নিয়ে আবার ভাত তরকারি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলো।

আমি হোটেল থেকে বের হয়ে চিন্তা করতে থাকলাম কার জন্য বেশি ভালোবাসা দেখানো উচিত। মেয়েটার প্রতি নাকি দোকানদারের প্রতি। হয়তো একটা কথা বলা যেতে পারে যে যুদ্ধ জিনিষটা বুঝে সেই যুদ্ধার ঘাম ও ক্ষুধার মূল্য দিতে জানে।

Thank you all for visiting my page and giving your nice support.
@aislam

Check my others social sides profile-
Facebook - https://www.facebook.com/profile.php?id=100007607950342
Instagram- https://www.instagram.com/aminul6032/?hl=en