হ-য- ব- র- ল মন...

in BDCommunity3 years ago

মানুষের মন বোঝা খুবই দায়। ক্ষণে ক্ষণে মানুষের আচরণ পরিবর্তনের পেছনে এই মনটাই দায়ী। পৃথিবীতে প্রতিনিয়তই মানুষের মন বোঝার জন্য মনোবিদরা কাজ করে চলেছেন। মনোবিদরা মানুষের আচরণ নিয়ে বিস্তর গবেষণা করে দেখেন যে, মানুষের প্রতিটি কাজের পেছনেই নির্দিষ্ট মোটিভ থাকে। নির্দিষ্ট করে বললে একটা মানুষকে মাত্র দুইটি বিষয় কোনো কাজ করার তাড়না দেয়। প্রথমটি জৈবিক ব্যাপার- ক্ষুধা, যৌনতা এসব। দ্বিতীয় কারণটি বেশি জটিল, স্যোসাল এক্সেপটেন্সের ব্যাপার।

আজকাল বিসিএস এর প্রতি যে এতো ঝোঁক, এটা তো এমনি এমনি তৈরি হয়নি। স্যোসাল এক্সেপটেন্স আর এটেনশনের ব্যাপার। বিসিএস এর বিরুদ্ধে যে যাই বলে আড়ালে আবার সবাই দুই একজন ক্যাডার তার পরিচিত বলে গর্ব করে, দুই একজনের ফোন নাম্বার বিপদে পড়লে ব্যবহার করে।

একজন বিজ্ঞানী কিংবা গবেষককে আপনি সেই স্যোসাল এক্সেপটেন্স দিতে পারেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের কোনো দরকার নাই পরিশ্রম করে নতুন নতুন গবেষণা করার যদি এর চেয়ে সহজ কোনো রাস্তায় প্রমোশন পাওয়া যায়। পড়ালেখা করে কোনো দরকার নাই কিছু শিখার যদি অন্য উপায়ে জিপিএ ফাইভ পাওয়া যায়। কারণ, পড়ালেখার স্যোসাল ভ্যালু নাই, ভ্যালুটা এ প্লাসের।

ইতিহাস পাঠ করে আদর্শের কর্মী হওয়ার কোনো দরকার নাই যদি শুধু সহমত ভাই বলে পোদ পদবি পাওয়া যায়। রাজনীতিতে ওটার ভ্যালুই বেশি।
বিয়ে করতে যাবেন সেটাও এমন ভাবে করতে হবে যেনো স্যোসালি এক্সেপটেড হয়। বিশাল করে দেখিয়ে দিতে হবে এমন প্রবণতা দেখা যায়।

স্যোসাল মিডিয়ায় কেনো আমরা নিজেদের অবস্থানের চেয়েও বেশি ভালো অবস্থাটা দেখাই? সব কিছুই স্যোসাল এক্সেপটেন্সের ব্যাপার। হোয়াট উই একচুয়ালি সিক? ইজ ইট ইনার পিস অর ইজ ইট অনলি দ্যা এটেনশন?

মজার ব্যাপার হচ্ছে আমরা যা যা নিজে খুঁজে বেড়াই তা পেয়ে অন্য কেউ সুখে থাকলে আমরাই তাদের অপছন্দ করতে থাকি। ইউ নেভার হেইট এনি জব অর ওয়ার্কার, ইউ হেইট অনলি ইফ দে বিকাম স্যোসালি এক্সেপটেড অর দে গট দ্যা এটেনশন। এই ব্যাপারটা বেশি ঘটে যারা ফেসবুক এডিক্টেড তাদের ক্ষেত্রে। ফেসবুকে মানুষ ব্রাউজিং করতে করতে প্রতিনিয়ত নতুন কিছু খুঁজে, আসলে কি খুঁজে সে নিজেও জানে না। একটা সময় গিয়ে সে টের পায়, এখানে অনেকেই তার চেয়ে সুখে আছে, তার চেয়ে ভালো বন্ধু-বান্ধবী আরেকজনের, সেরা চাকরিটা তার কাছের কেউ করছে, অনেকে বিদেশ টিদেশ ঘুরে একাকার, অনেকে তার চেয়ে বেটার, তার চেয়ে সাকসেসফুল ইত্যাদি। এভাবেই হতাশা, বিবমিষা, ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয়।

রাতারাতি আপনি মানুষকে পালটে ফেলতে পারবেন না। এমেরিকা ইউরোপের উদাহরণ দিয়েও লাভ নেই। এফবিএস থেকে কেনো বড় মাল্টিন্যাশনালের সিইও আসে না এটার উত্তর খুঁজতে হলে দেখতে হবে এই ব্যাপারটা কেনো ড্রাইভ করতে পারছে না সেভাবে। আপনাকে দেখতে হবে, বুয়েটের ছেলে যদি দেশ উদ্ধার করার মতো কোনো প্রজেক্ট বানায় সেটা তার জীবনকে কতটা সিকিউর করবে? মেডিক্যালের কেউ যদি এইডসের ঔষুধও বের করে ফেলে তবুও এদেশের লোক বলবে ডাক্তার জাতটাই কসাই।

ভালো কিছু গ্রহণ করার ক্ষমতা বাংলাদেশি মানুষের নেই। সে কে কত খারাপ এন্টারটেইনার তা নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা গল্প করতে পারে কিন্তু কে ভাল কাজ করছে তা নিয়ে দুই লাইন লিখবে না। যেটা নিয়ে কথা চলে, তার বাইরে গিয়ে আলাদা কিছু ভাবতে পারে না সে কারণ ওতে এটেনশন কম মিলে।

এই দেশের মানুষ অদ্ভুত। যদু মদুকে ভোট দিবে, নিজে রাজনীতিকে নোংরা চোখে দেখবে, তারপর ৫ বছর তাদের রাজনীতি সব বাজে লোকে করে বলে আবার সেই যদু মদুকেই ভোট দিবে। অথচ, মাশরাফিরা রাজনীতি করবে শুনে এরা ভেটো দিয়ে বসে, তার মতো লোক কেনো রাজনীতি করবে? কি সাইকোলজি এদের!

এদেশের লোক না সাইন্সটা ঠিক করে বুঝলো, না সাইকোলজি। এখানে লোকে না বুঝে স্যাটেলাইটের মর্ম, না বুঝে রোবটের মর্ম, আবার তারা আশা করে বুয়েটের ছেলে পেলেরা বসে বসে গবেষণা করবে। ভাবটা এমন ঢাবি, বুয়েটের সবাই গবেষণা করবে আর সে বসে বসে গবেষণা চিবাবে। বাস্তবে গিয়ে দেখা যাবে সেও অন্য কোথাও নিজের আখের গুছাইতে ব্যস্ত, স্যোসাল এক্সেপটেন্স পেতে ব্যস্ত। এসব জ্ঞ্যান বিতরক সম্প্রদায়ের কথায় কান দিয়ে লাভ নেই। যার যার ধ্বংস তার তার হাতে।।।

IMG_20190217_185019.jpg

Sort:  

যার যার ধ্বংস তার তার হাতে।।।

সব কিছুর মূল কথা এই একটাই।
এই স্যোসাল এক্সেপটেন্স নামক ব্যাধি থেকে সবাই নিজেকে মুক্ত করে নিজ নিজ ইন্টারেস্টের জায়গাটা বিকাশে শ্রম দিলে হয়তো চিএটা অন্যরকম হতো। ভালো লিখেছেন।

আমরা সবাই এগুলো জানি কিন্তু মানি না, রিসেন্টলি Voice Of Dhaka এর আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে একটা ভিডিও বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল, দেখেছেন? Watch if you haven't. ৯৯% মানুষই ভিডিওটির যে মূল কথা তা জানে, হয়তো ভিডিওটি দেখার সময় মনে মনে দুইটা করে গালিও দিয়েছে তারপর দেশের শিক্ষাব্যবাস্থায় মায়া দেখিয়ে একটা স্যাড রিয়্যাক্ট তারপর? তারপর স্ক্রল করে নেক্সট কোনো একটা সোশ্যাল মিডিয়া স্প্যাশাল ক্রিঞ্জি ভিডিও শুরু, আগের ভিডিও এর রেষ সেখানেই শেষ। That's how everything grows.