অনেক স্বপ্ন বুকে ধারণ করে এবং অনেক কাঠখড়ি পুড়িয়ে একজন বাংলাদেশী বিদেশ খাটতে আসে। বিভিন্ন দালালের কথার প্রলোভনে পড়ে, নিজের সর্বস্ব টুকু বিক্রি করে হলেও অনেকে বিদেশ মুখি হতে চায়। কেউ শুরুতেই টাকা হারিয়ে পথে বসে, স্বপ্নের বিদেশ স্বপ্নই থেকে যায়। কেউ আবার হাওয়াই জাহাজে চড়ে বিদেশের মাটিতে পা দিয়েই যেন অকুল পাথারে পড়ে। দ্বিতীয় গ্রুপের একজন বাংলাদেশী আজ আমার চেম্বারে এসেছিল পেটে ব্যথা নিয়ে।
নাম তার শাহ আলম। পতাকা অনুযায়ী তার বয়স ২৯ বছর। তবে দেখে মনে হচ্ছিল আসল বয়স হয়ত আরও কম হবে। বিদেশে আসার জন্য অনেকেই পাসপোর্টে বয়স বাড়িয়ে নেয়। গত ১ সপ্তাহ ধরে তার পেটে তীব্র ব্যথা। ডান পাশের নিচের দিকেই ব্যথাটা বেশী ছিল। মাঝে মাঝে বমিও হয়েছিল এই কয়েকদিনে। সে তার আরবাব (sponsor) কে নাকি জানিয়েছিল কিন্তু আরবাব তাকে কোন ডাক্তারের কাছে নেয় নাই। সে নিজেই কোন একটা ফার্মেসিতে গিয়েছিল ওষুধ কিনতে। ফার্মাসিস্ট তার লক্ষ্মণ শুনে বলেছিল ডাক্তার দেখাতে। কিছু ব্যথা-বেদনার ওষুধও দিয়েছিল। কিন্তু ব্যথা কমে নাই।
এর মাঝে সে কাজও করেছে ব্যথা নিয়ে। কারণ এখানে এসে যারা মেশনের কাজ (রাজমিস্ত্রী) করে বেশীরভাগই দিন হাজিরা হিসাবে বেতন পায়। কাজে না গেলে বেতন নাই। যাইহোক, আজ সকালেও সে কাজে গিয়েছিল কিন্তু ব্যথার তীব্রতায় কাজ থেকে চলে আসে।
আমি তাকে physical examination করলাম। আমার কাছে মনে হল উনি acute appendicitis নামক রোগে ভুগছেন। ডায়াগনোসিস ফাইনাল হবার পর এটার সঠিক চিকিৎসা হচ্ছে অপারেশন। আবার ডায়াগনোসিস এর জন্য কিছু টেস্ট করার দরকার। ওমানে চিকিৎসা খরচ বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশী। টেস্ট করানো, সার্জারীর স্পেশালিস্ট দেখানো এবং (প্রয়োজন হলে) অপারেশন করানোর যা খরচ, তা বহন করা উনার পক্ষে সম্ভব নয়। উনার ভাষ্যমতে, আরবাব কোন খরচ দিবে না।
উনি যে দেশে যাবেন জরুরি ভিত্তিতে, এই করোনা প্যান্ডেমিকের ভেতরে সেটাও সম্ভব না। তবে অন্য কোন উপায় না থাকায় দেশে যাওয়ার চেষ্টায়ই করবেন বললেন। আমি কিছু ব্যথা-বেদনার ওষুধ দিলাম। বড় হাসপাতালে সার্জারীর ডাক্তার দেখানোর জন্যে একটা emergency referral letter ও দিলাম। তবে এই লেটার নিয়ে সরকারি বড় হাসপাতালে যাবেন না উনি। এই পেপার উনার আরবাব কে দেখিয়ে জুরুরি ভিত্তিতে দেশে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। সেটা সম্ভব হলেও ১ সপ্তাহের মধ্যে হয়ত যেতে পারবেন না। এপেন্ডিসাইটিস এর একটা জটিলতা হচ্ছে নাড়ি পেচিয়ে যাওয়া। আমার দেয়া ওষুধে যদি তার ব্যথা কমে যায় তাহলে তো ভালই। কিন্তু জটিলতা শুরু হলে উনার জীবন নিয়েই টানাটানি শুরু হয়ে যাবে।
আল্লাহ উনার বিষয়গুলোকে সহজ করে দিন।
ভাই সত্যি বিষয়টি খুবই জটিল আমাদের বাংলাদেশীদের জন্য, কারন এই ক্ষেত্রে যত দেরী করা হয় ততবেশী সমস্যা তৈরী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে এটা সত্য যে, আমি সব সময় তাদের নানা ধরনের মানসিক ত্যাগকে সম্মানের চোখে দেখি। কারন তারা নানাভাবে নানা সমস্যা ভোগ করেও দেশের রেমিটেন্স ঠিক রাখার চেষ্টা করছেন। ধন্যবাদ ভাই আপনার অভিজ্ঞতাটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
হ্যা ভাই। এরকম ভোগান্তি তে ভোগা বাংলাদেশীর সংখ্যা অগনিত। খুব কমই আমরা জানতে পারি।
এরা এখানে আসার পর নিজেদের ভুল বুঝতে পারে। কিন্তু ততক্ষণে দেরী হয়ে গেছে। তাই মুখ বুঝে পড়ে থাকা ছাড়া আর কিছু করার থাকে না।
অন্য ইউজার রা বিরক্ত না হলে এরকম আরো অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারব ইনশাআল্লাহ।
ভাই এটা আমাদের জন্য দারুন এক সুযোগ, আমি জানতে চাই প্রবাসীদের কথা এবং এ বিষয়ে আপনার অভিজ্ঞতাগুলো। কারন আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ বুঝতে চায় না তাদের ত্যাগ এবং কষ্টগুলো। তাছাড়া তাদের কষ্টের এই কাহিনীগুলো সবার অজানা থেকে যায় সব সময়।
ঠিক আছে। আমি চেষ্টা করব আমার অভিজ্ঞতা গুলো শেয়ার করার জন্য।
এটা অবশ্য সত্য যে, দেশে যারা আছেন, তারা বিদেশীদের অবস্থা আচ করতে পারেন না। তবে কিছু প্রবাসীরা যে ভাল আছেন এব্যাপারেও কোন সন্দেহ নাই।
ধন্যবাদ আমাদের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেয়ার জন্য
নিজের কথা-নিজের অনুভূতি-প্রকাশ করো নিজের ভাষায়
আপনাকেও ধন্যবাদ সাপোর্ট দেবার জন্যে।