এ আর এমন কি!!!

in Hive Bangladesh4 years ago (edited)

একটা গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। গল্পের সঠিক উৎসের কথা বলতে পারছি না তবে কোনো এক বন্ধুর কাছ থেকে শোনা। বিল গেটস তার তুরস্কের একটি নতুন প্রকল্পের জন্য কিছু লোক নিয়োগ করবেন। তো তিনি সারা বিশ্ব থেকে সিভি আহ্বান করলেন। দুইটি বিশেষ যোগ্যতার কথা তিনি সেখানে বলে দিয়েছিলেন আর তা হল জাভা প্রোগ্রামিং এবং তুর্কি ভাষায় দক্ষতা। তো দেখা গেল সারা বিশ্ব থেকে হাজারেরও বেশি মানুষ এখানে আবেদন করেছে।

narrative-794978_1920.jpg
Source: Image by Comfreak from Pixabay


অনেকগুলো আবেদন থেকে কিভাবে তিনি লোক নির্বাচন করবেন চিন্তায় পড়ে গেলেন। তাই তিনি সবাইকে একটি কক্ষে একসাথে ডাকলেন। সবার উদ্দেশ্যে বললেন, যাদের অন্তত দুটি প্রোগ্রামিং ভাষা জানা আছে তাদেরকে আমরা নির্বাচন করব বাকিরা এই কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে পারেন। বাংলাদেশের মিস্টার চতুর সাহেব সেসময় ওই কক্ষ ত্যাগ করেননি কারণ তিনি মনে মনে ভেবেছিলেন আগে একবার চাকরিটা হোক তারপর দুই মাস ট্রেনিং করে দুটি প্রোগ্রামিং ভাষা শিখে নিব। এ আর এমন কি। তো কিছু লোক কক্ষ ত্যাগ করল কিন্তু চতুর সাহেব কক্ষেই রয়ে গেলেন।

বিল গেটস এবার বললেন আমাদের এই প্রকল্পের কাজ হবে ওয়েব ডেভলপমেন্ট সংক্রান্ত তাই যারা ওয়েব ডেভলপমেন্ট পারেন না তারাও এই কক্ষ ত্যাগ করতে পারেন। অনেকেই কক্ষ ত্যাগ করল কিন্তু চতুর সাহেব ভাবলেন ওয়েব ডিজাইন! এ আর এমন কি! এক মাস কোর্স করে শিখে নিব, আগে চাকরিটা হোক। বিল গেটস বললেন, আপনারা যারা মাইক্রোসফট অফিসে পারদর্শী কেবলমাত্র তারাই বিবেচনাযোগ্য, বাকিরা চলে যেতে পারেন। তো চতুর সাহেব বরাবরের মত এই ভেবে রয়ে গেলেন যে, মাইক্রোসফট অফিস! এ আর এমন কি! এক সপ্তাহ ইঊটিউব দেখেই শিখে নিব, আগে চাকরিটা হোক।

bunny-3830669_1920.jpg
Source: Image by www_slon_pics from Pixabay


এভাবে করে বিল গেটস একের পর এক শর্তারোপ করে বাছাই করছেন। আর চতুর সাহেব কক্ষেই রয়ে যাচ্ছেন। শেষমেশ কক্ষে কিছুমাত্র লোক অবশিষ্ট রইল। বিল গেটস এবার শেষ দক্ষতা হিসেবে বললেন, আপনারা যারা অনর্গল তুর্কি ভাষা বলতে ও লিখতে পারেন তারা আমাদের এই প্রকল্পের জন্য উপযুক্ত। বাকিরা চলে যেতে পারেন। তো দুইজন ছাড়া বাকি সবাই চলে গেলেন। আর বিল গেটস খুব খুশি হলেন কারন তিনি কাঙ্খিত দুইজন পেয়ে গেছেন, যেখান থেকে একজন নির্বাচন করা সহজ হবে। এবার তিনি দুজনকে তুর্কি ভাষায় নিজেদের মধ্যে কথা বলতে বললেন। চতুর সাহেব অপর লোকটিকে বাংলায় বললেন, ভাই ভাল আছেন? উনিও বাংলায় উত্তর দিলেন, জি, ভাল। আপনি ভাল আছেন তো?

এই গল্পটি বলার উদ্দেশ্য বাঙালি কিংবা বাংলাদেশিদের ছোট করা নয়। বরং এই প্রবণতা নিয়ে কিছু কথা বলার জন্য যা বর্তমান সময়ে আমাদের সমাজে দেখা যায়। প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সাথে সাথে আমরা আমাদের কাজকে সহজ করতে পারছি। যেমন আমরা চাইলেই ঘরে বসে মুহূর্তে বিশ্বের বিভিন্ন বিষয়ের তথ্য সংগ্রহ করতে পারি। অর্থাৎ জ্ঞানের যে পরিধি যেমন শিক্ষক, বই পুস্তক, টিউটরিয়াল, ডেমন্সট্রেশন সেগুলো প্রযুক্তির কল্যাণে আমাদের হাতের নাগালে। আমরা চাইলে মুহূর্তেই যেকোনো টপিকের উপর গবেষণা ভিত্তিক পড়াশোনা করতে পারছি।

কিন্তু যখন মানুষের কাছে বই পুস্তক এত সহজলভ্য ছিল না, তখন তারা যে জ্ঞান অর্জন করেছেন আমরা কি তাদের ধারেকাছেও জ্ঞান অর্জন করতে পারছি? প্রশ্ন থেকে যায়। হ্যা কিছু কিছু ব্যাপারে আমরা মোবাইল ফোনটা হাতে নিয়েই কিংবা কম্পিউটারের এক ক্লিকেই উত্তর বের করে ফেলতে পারি। কিন্তু কিছু জ্ঞান আছে যা চর্চা করে অন্তরে ধারণ করতে হয়। সেই সব জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে আমরা প্রযুক্তির উৎকর্ষতার পরেও কতটা অগ্রসর হতে পারছি, খুবই ভাববার বিষয়। আমাদের কোন একজন অধ্যক্ষ মহোদয় বলেছিলেন, তিনি বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়ার পর লাইব্রেরীতে গিয়ে পুরো সিলেবাসটি হাতে লিখে নিয়ে এসেছিলেন কারন তখন ফটোকপিয়ার এত জনপ্রিয় ছিলনা। আর এখন আমাদের হাতে শুধু নিজেদের নয় আশেপাশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস মুহূর্তে চলে আসতে পারে। কিন্তু কতজন ছাত্র সেই সিলেবাসকে উল্টিয়ে দেখে, এটাই চিন্তার বিষয়। যারা এই লিখাটি পড়ছেন, তারা নিজেকে প্রশ্ন করে দেখি, কতটি বইয়ের পিডিএফ আমরা পড়েছি। অনেক বই আছে সংগ্রহশালায়। কিন্তু কয়টি পড়েছি, সত্যিই ভাববার বিষয়।

books-768426_1920.jpg
Source: Image by Free-Photos from Pixabay


এবার আসা যাক, গল্পের ব্যাপারে। আমাদের অনেক শিক্ষার্থীকেই দেখা যায় ক্লাসে অমনোযোগী থাকে। ক্লাসের পড়া গুলো জমাতে থাকে। এবং ক্লাস লেকচার এর শিট, ভিডিও কিংবা যারা নিয়মিত ক্লাস করে তাদের ক্লাস নোট এর ফটোকপি চায়। অর্থাৎ ক্লাসের পুরোটা সময় জুড়ে মনোযোগ দেবে না, কিন্তু শেষে গিয়ে সবকিছু আয়ত্ত করে ফেলবে। বিষয়টা এমন যে, ক্লাস লেকচার সহ অনেক অনলাইন সোর্স হাতের কাছে আছে, ২/৩ দিন সময় নিয়ে শিখে নিবে। এ আর এমন কি!! সেই চতুর সাহেবের মত। পরে শিখে নিব। সবই ত অনলাইনে আছে। তাদের জ্ঞাতার্থে বলছি, যেই ক্লাস ৪৫ কন্টাক্ট আওয়ারে শেষ করা হয় সে ক্লাশ দুইদিন পড়াশুনা করে হাতড়ানো ছাড়া আর কিছু করা করা যায় না। এজন্যই পরীক্ষা আমাদের জন্য অনেক চাপের মনে হয়। আসলে এমনটি হওয়ার কথা ছিল না। ৪৫ দিনে একটু একটু করে আমরা যে খাবার খাই, তা একসাথে অনেক খাবার এবং দুইদিনে সাবার করা অযৌক্তিক।

আমার কাছে সবচেয়ে বেশি কষ্ট লাগে তখনই যখন দেখি, একজন ছাত্র তার ছাত্রজীবনে ছাত্র হিসেবে তাঁর যে কাজ সেটার ধারে কাছেও নেই। ছাত্রজীবনের মূল কাজ হচ্ছে ক্লাস করা এবং ক্লাশ শেষে ও শুরুতে ক্লাশ লেকচারগুলোকে বইয়ের সাথে মিলেয়ে নিজের মত এনালাইসিস করে পড়াশোনা করা তা সে যে পর্যায়ে পড়াশুনা করুক না কেন। কিন্তু আমার মনে হয় না, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ৫ % শিক্ষার্থীও এই কাজটি করছে। কেন এমন হচ্ছে? খুবই ভাববার বিষয়। তবে কি সব পড়াশুনা বৃথা? তবে কি ক্লাশ হাজিরা নম্বর, ক্লাশ লেকচার শিট ও পরীক্ষার আগে পড়াশুনা করে পাশ করার জন্যই সবকিছু!!!


LIne Break Hive.png

Who I am

LIne Break Hive.png

This is Sayful

Ex Banker
Part time blogger
By Profession Lecturer
Fasinated by Nature and Cricket
Day dreamer and a round pig in square hole
Write on Textiles, Online Money Making, Agriculture & Technology

LIne Break Hive.png

Upvote, Reblog and Follow me on hive @engrsayful

Intro Hive.gif

LIne Break Hive.png

This is Saiful’s Classroom from @engrsayful

Find me on

Sort:  

ধন্যবাদ আমাদের সাথে চমৎকার এবং শিক্ষনীয় কিছু ভাগ করে নেয়ার জন্য

নিজের কথা-নিজের অনুভূতি-প্রকাশ করো নিজের ভাষায়

Hive Bangladesh copy.jpg

ধন্যবাদ এমন একটি সুযোগ করে দেয়ার জন্য

শুভ সকাল ভাই,
আপনি যে এতো সুন্দর গল্প লিখতে পারেন, সেটা কিন্তু আমি জানতাম না আগে।
সত্যি ভাই আমি বিষয়টি গল্পের মাধ্যমে দারুনভাবে উপস্থাপন করেছেন, আমাদের ক্লাসের স্যার বলতো, যদি প্রতিদিন একটি করে ইট দ্বিতীয় তলায় উঠাতে বলা হয়, তবে সবাই তা পারবে। কিন্তু কেউ যদি 25 দিন ফাকি দিয়ে বাকি 5 দিনে 30টি ইট উপরে উঠাতে গেলে সে ব্যর্থ হবে।

ঠিক বলেছেন। বিডিকমিঊনিটিতে অনেক লিখা লিখেছিলাম। পরে বাদ দিছি। এখন এখানে লিখার চেষ্টা করব

ভাই যেখানেই লিখেন, আমাদের কথা হলো বাংলাকে আমরা ব্লকচেইনে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই, যাতে সবাই নিজের ভাষায় নিজের অনুভুতি সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার সুযোগ পায়।

Nice initiative via.
(I am writing from my office computer where Avro is not installed)

এটা দুঃখজনক, তবে আপনি চেষ্টা করলে গুগল ট্রান্সলেটর ব্যবহার করতে পারেন, যেখানে অভ্রর মতো করে ইংরেজী শব্দ দিয়ে বাংলা লিখা যায়। আমি সত্যি খুব খুশি হবো যারা আমাদের এখানে বাংলায় তাদের অনুভূতি শেয়ার করছেন, তাদের লেখার ব্যাপারে যদি আপনি পরামর্শ দিয়ে তাদেরকে উৎসাহিত করেন।

অবশ্যই

I heard the story before in the Facebook I think. Thanks for reminding us again. This is humorous, but at the same time, we can extract lessons from it.

Regarding the nature of our current students, I am also guilty of that. Alhamdulillah, I didn't suffer much for such approaches.

Thanks for such a beautiful post.

আমি এ বিষয়ে খুব উদ্বীগ্ন। কারন ছাত্ররা নিজেদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করছে। এতে জাতির ভবিষ্যৎ শুভকর হবে না

অসাধারণ লিখেছেন।

সেই চতুর সাহেবের মত। পরে শিখে নিব। সবই ত অনলাইনে আছে। তাদের জ্ঞাতার্থে বলছি, যেই ক্লাস ৪৫ কন্টাক্ট আওয়ারে শেষ করা হয় সে ক্লাশ দুইদিন পড়াশুনা করে হাতড়ানো ছাড়া আর কিছু করা করা যায় না। এজন্যই পরীক্ষা আমাদের জন্য অনেক চাপের মনে হয়। আসলে এমনটি হওয়ার কথা ছিল না। ৪৫ দিনে একটু একটু করে আমরা যে খাবার খাই, তা একসাথে অনেক খাবার এবং দুইদিনে সাবার করা অযৌক্তিক।

এটা সত্যিই চমৎকার একটি উদাহরণ।

ধন্যবাদ কাউছার। তোমাকে এই কমিউনিটি তে তোমার ভাল ভাল বাংলা পোস্ট সহ দেখতে চাই। ভাষা হোক মাতৃভাষা