বিশ্বকাপ উন্মাদনায় এখনো টগবগ না করলেও মোটামুটি প্রস্তুত রাশিয়া। এই ছবি অন্তত তাই বলছে।
বিশ্বকাপ উন্মাদনায় এখনো টগবগ না করলেও মোটামুটি প্রস্তুত রাশিয়া। এই ছবি অন্তত তাই বলছে। ছবি: রয়টার্স
বিশ্বকাপ উন্মাদনায় এখনো টগবগ না করলেও মোটামুটি প্রস্তুত রাশিয়া। এই ছবি অন্তত তাই বলছে। ছবি: রয়টার্স
বিমান যখন মস্কোর আকাশের কাছাকাছি, পাইলট এরিক গনজালভেস জানিয়ে দিলেন তাপমাত্রা ১০-১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জ্যাকেটটা গায়ে চাপিয়ে নিলাম। দোমোদেদোভো বিমানবন্দরে নেমে অনুভূতিটা একটু বেশিই শীতার্ত মনে হলো। তাপমাত্রা যাই থাক, প্রবল হাওয়ার দাপট আমাদের বাঙালি রক্তের পক্ষে সেটিকে একটু অসহনীয় করে তোলে বৈকি।
স্থানীয় সময় শুক্রবার হাওয়ার সঙ্গে শুরু হলো বৃষ্টি। পরিচয়পত্র জোগাড় করে অ্যাক্রেডিটেশন সেন্টার থেকে বেরোনোর সঙ্গে সঙ্গেই বৃষ্টির আলিঙ্গন। এমনই যে ঘণ্টাখানেক আটকে থাকতে হলো লুঝনিকি স্টেডিয়ামের উল্টো দিকের একটা কফিশপে। মস্কোর লোকজন বলাবলি করছে ঠান্ডাটা হঠাৎই একটু অস্বাভাবিক ঠেকছে। এই সময়ে তাপমাত্রা ২০-২২-এর মধ্যে ঘোরাফেরা করে। যাকে বলে আরামদায়ক আবহাওয়া। তাদের মুখে আশার বাণী, এমন ঠান্ডার প্রকোপ বেশি দিন থাকবে না। না থাকলেই ভালো। সফল ও সুন্দর বিশ্বকাপের জন্য ভালো আবহাওয়াটাও জরুরি।
কিন্তু একটা জিনিস এখানে ভালো ঠেকছে না। এখানেও ভাষা একটা দূরত্ব তৈরি করবে। চার বছর আগে ব্রাজিল বিশ্বকাপে যেমন অনেক সাংবাদিককে ছবি এঁকে, সর্বজনীন ইশারা ভাষা ব্যবহার করেও ভাষার দূরত্ব দূর করা যায়নি, তা হয়তো হবে না। তবে ভোগান্তি একটু হবেই। ইংরেজিটা রুশদের কাছে এখনো অনেক দূরের ভাষা। বলা হচ্ছে রাশিয়ার নতুন প্রজন্ম ইংরেজি শিখছে, তারা বেশ ভালোই ইংরেজি বলতে পারে। বাস্তবে তা মনে হলো না। বাঁধা ছকের বাইরে এরা যেতে পারে না। একটু বিশদ হতে চাইলেই খেই হারিয়ে ফেলে। বিশ্বকাপ শুরু হলে হাজার-হাজার স্বেচ্ছাসেবকের মধ্যে ইংরেজিতে দক্ষ অনেককেই হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে—এই আশাতেই দিন গুনছি।
লুঝনিকি স্টেডিয়াম
তবে সমস্যা হবে ট্যাক্সি সার্ভিসের ক্ষেত্রে। শুক্রবার সকালের একটি ঘটনার কথাই বলি—এখানকার একটি নির্ভরযোগ্য ট্যাক্সি সার্ভিস ইয়ানডেক্স। মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে একটি ট্যাক্সিকে আসতে বলে ঠিকানা জানালাম। নভোচের নোমুস্কিনস্কায়া, ২৪ নম্বর বাড়ির কাছে এসে ট্যাক্সিওয়ালা আর রাস্তা খুঁজে পান না। তাঁর সঙ্গে ফোনে কথা হলো বার দু-এক। রুশ ভাষায় ঝড়ের বেগে কী বলেন বোঝা যায় না। তাঁকে এসএমএস পাঠিয়ে পথ নির্দেশ করা হলো। এক বর্ণ ইংরেজি বোঝেন না, লিখতেও পারেন না। অগত্যা বুকিং বাতিল। অবশেষে মেট্রোরেলযোগে যেতে হলো লুঝনিকিতে।
ওখানেই ফেরার পথে সাক্ষাৎ মস্কো গণপরিবহন কর্তৃপক্ষের গভর্নর দিমিত্রি প্রনিনের সঙ্গে। ভদ্রলোক স্থানীয় গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলছিলেন। মওকা মতো জানিয়ে দেওয়া গেল ট্যাক্সিওয়ালাদের যোগাযোগ বিভ্রাটের ব্যাপারটি। তিনি কথা দিলেন ব্যবস্থা নেবেন অচিরেই। কিন্তু বিশ্বকাপের মতো রাজসূয় যজ্ঞের এত কাছাকাছি এসে কি ট্যাক্সিচালকদের মুখে ইংরেজির তুবড়ি ছোটানোর ব্যবস্থা করা যাবে? মস্কোয় লেখাপড়া করতে আসা কয়েকজন বাংলাদেশি ছাত্র যেমন বলছেন, উচিত ছিল আরও আগে থেকেই নির্বাচিত ট্যাক্সি চালকদের ইংরেজির ওপর সংক্ষিপ্ত কোর্স করানো।
লুঝনিকি স্টেডিয়াম।
দিমিত্রি প্রনিন ও তাঁর বিশাল বাহিনী অবশ্য সংক্ষিপ্ত পথে হাঁটতে চাইছেন না। তাঁদের পরিকল্পনা অনেক বড়। রাশিয়ার বিশ্বকাপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাজ্য এত দিন ধরে অপপ্রচার চালিয়ে এসেছে, সেটির জবাব দিতে বিশ্বকাপের স্থানীয় আয়োজক সংস্থা উন্মুখ বলেই ইঙ্গিত দিলেন তাঁরা।
একেকটি বিশ্বকাপ আসে আর স্থানীয় আয়োজক সংস্থা বলে এটাই হবে সফল ও সুন্দরতম বিশ্বকাপ। এমন প্রতিযোগিতার শুরু সেই ১৯৮৬ মেক্সিকো বিশ্বকাপ থেকে। স্মরণ করা যেতে পারে এশিয়ায় অনুষ্ঠিত একমাত্র বিশ্বকাপ ২০০২ কোরিয়া-জাপান। সেবার প্রায় সব জায়গায় দেখা গিয়েছিল পশ্চিমা দুনিয়ার নাক সিটকানো ভাব। এমন যে কোরিয়া-জাপান ভোটের মাধ্যমে বিশ্বকাপের যৌথ আয়োজনের ভার পেয়ে মহা অন্যায় করে ফেলেছে। উত্তরকালে দেখা গেল কোরিয়া-জাপান বিশ্বকাপ একটা মাইলফলকই গড়েছে ফুটবলের ইতিহাসে।
রাশিয়াও প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ আয়োজন করে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য নিয়ন্ত্রিত পশ্চিমা দুনিয়াকে দেখিয়ে দিতে চায়। এই রাশিয়া পুতিনের রাশিয়া, এই রাশিয়া স্নায়ুযুদ্ধকালীন বিষণ্নতা কাটিয়ে আবারও নতুন করে মাথা তুলে দাঁড়াতে চাওয়া রাশিয়া।
লুঝনিকি স্টেডিয়াম।
তবে একক খেলার সবচেয়ে বড় আয়োজন বলে ভাবা গিয়েছিল বিশ্বকাপের এক সপ্তাহ আগে দাঁড়িয়ে মস্কোকে টগবগ ফুটতে দেখব। তা কিন্তু শুক্রবার পর্যন্ত দেখা যায়নি। সবার আগে ৫ জুন রাশিয়ায় পা রেখেছে এবারের বিশ্বকাপে প্রথম এশীয় অভিযাত্রী ইরান। দ্বিতীয় শিরোপা জয়ের অভিযাত্রায় পরদিন এসেছে হুলেন লোপেতেগির স্পেন। তবু কী যেন নেই কী যেন নেই! ব্রাজিল-আর্জেন্টিনাই যে আসেনি এখনো। এই দুটি দল যখন আসবে বিশ্বকাপ রাশিয়ার চারদিকে ছড়িয়ে দেবে রং ও রস। ব্রাজিলতো শুধু হলুদ-সবুজ রং নিয়েই আসে না, আসে তার বহু বর্ণিল সমর্থকদের নিয়ে। আর্জেন্টিনার আকাশি রঙের সঙ্গে আসে তাদের ‘বিখ্যাত’ সমর্থকগোষ্ঠী বারাস ব্রাভাস।
প্রধান আইডি সেন্টারের স্বেচ্ছাসেবক ইলিয়া বেশ গম্ভীর স্বরে এমনভাবে কথাটা বললেন যেন এটি তাঁর নতুন আবিষ্কার। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা এলেই দেখবেন রাশিয়ার বিশ্বকাপ রঙে-রসে একেবারে টইটম্বুর করছে!
১০ জুন আর্জেন্টিনা দলের আসার পথের দিকে তাকিয়ে আছে রাশিয়া। আরও বাড়তি একটি দিন রুশদের প্রতীক্ষা বাড়াবে ব্রাজিল। এমনকি ইংল্যান্ডের জন্যও পথ চেয়ে আছে তারা। অথচ এই ইংল্যান্ডের কাছে বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক রাজনীতিতে রাশিয়া কিনা মহাশত্রু। তবে ইংল্যান্ড নয়, ইউরোপের দলগুলির মধ্যে পুতিনের রাশিয়ায় সবচেয়ে জনপ্রিয় দল জার্মানি।
Congratulations @methun! You have completed some achievement on Steemit and have been rewarded with new badge(s) :
Award for the number of upvotes
Click on the badge to view your Board of Honor.
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
Hi! I am a robot. I just upvoted you! I found similar content that readers might be interested in:
http://www.boxofficemojo.com/