কেন জঙ্গিবাদে ঝুকছে শিক্ষার্থীরা?
প্রকাশিত: বুধবার, ২৫ এপ্রিল ২০১৮, ১২:২৪
মো. আসফার হোসেন (২১)। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবসম্পদ ব্যবস্থপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। গত ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনার অভিযোগে পুলিশ চট্টগ্রামের একটি বাসা থেকে তাকেসহ সাতজনকে আটক করে। এর আগেও হলি আর্টিজেনে হামলাসহ কয়েকটি ঘটনায় শিক্ষার্থীদের জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে এসেছে। সম্প্রতি জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের সাথে আশংকাজনক হারে সম্পৃক্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা ।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বাদ দিয়ে কেন শিক্ষার্থীরা জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছে, এর পিছনে কি কি দায়ী এসব নিয়ে ব্রেকিংনিউজের সাথে কথা বলেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. নুরুল ইসলাম।
তরুণ প্রজম্ম বা শিক্ষার্থীরা কেন জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের জঙ্গিবাদের সাথে জড়িয়ে পড়ার পিছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে আর্থিক সুবিধা, সঙ্গীর প্রভাব, পরিবারের নজরদারির অভাব, আত্মপরিবর্তন, পরিবেশের প্রভাব, বুদ্ধিভিত্তিক প্রেষণা, প্রতিশোধপরায়ণতা, ধর্মের অপব্যাখ্যা, নৈতিক ও সঠিক ধর্মীয় শিক্ষার অভাব অন্যতম।
তিনি বলেন, দরিদ্রতার কারণে অনেকে আর্থিক সুবিধা লাভের জন্য এই পথে চলে যায়। তাছাড়া অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের বন্ধুদের মধ্যে যদি কেউ ওই মতাদর্শে বিশ্বাসী হয়, এক্ষেত্রে ওই বন্ধুর বিশেষ প্রভাব তার অন্য বন্ধুদের উপর পড়ে।
অন্যদিকে এই পথে যাওয়ার আরেকটি কারণ হিসেবে এই মনোবিজ্ঞানী সন্তানদের প্রতি পরিবারের সঠিক নজরদারির অভাবকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে পিতামাতা বা পরিবারের সদস্যরা সন্তানদের প্রতি সুষ্ঠু নজরদারি করেন না। সন্তান কোথায় যায়? কি করে? কার সাথে মিশে এসব বিষয়ে নজরদারি করেন না। ফলে তারা জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়লেও পিতামাতার কিছু করার থাকে না।
এ পথে যাওয়ার আরেকটি কারণ আত্মপরিবর্তনের বিষয়ে নুরুল ইসলাম বলেন, মাঝেমধ্যে দেখা যায়, কৌতূহলবশত হয়ে শিক্ষার্থীরা জঙ্গিবাদ সংক্রান্ত বিভিন্ন ম্যাগাজিন বা সাময়িকী পড়ে থাকে। পড়ার পর অনেকে নিজে নিজে এর দিকে ধাবিত হয়। এছাড়া শিক্ষার্থীরা যে পরিবেশে থাকে তা যদি জঙ্গিবাদ সমর্থিত হয় তবে তাও বিপথে যাওয়ার একটি কারণ।
আবার অনেক সময় বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন ধীরে ধীরে শিক্ষার্থীদের মস্তিষ্কে জঙ্গিবাদের বিভিন্ন বিষয় ঢুকিয়ে দেয়। আর এটা হলো বুদ্ধিভিত্তিক প্রেষণা। যাকে মনোবিজ্ঞানের ভাষায় Cognitive aspect বলে।
তিনি আরো বলেন, ধর্মের অপব্যাখ্যাও জঙ্গিবাদে জড়ানোর অন্যতম কারন। জঙ্গি সংগঠনগুলো শিক্ষার্থীদের জিহাদ, অমুসলিম হত্যাসহ বিভিন্ন বিষয়ে ধর্মের অপব্যাখ্যা করে। ফলে শিক্ষার্থীরা অমুসলিম বা ধর্মের প্রতি বিরূপ ধারণা পোষণকারীদের হত্যা করলেই জান্নাত পাবে এই আশায় জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পরতে পারে।
এই মনোবিজ্ঞানী আরো বলেন, কেউ যদি কোন লিগ্যাল বিষয় থেকে অবদমিত বা বঞ্চিত হয় তখন সে প্রতিশোধ গ্রহণ করার জন্য এমন কোন সংগঠন জড়িয়ে পড়তে পারে।
এ বিষয় থেকে উত্তরণের বিষয়ে চবির মনোবিজ্ঞান বিভাগের এই শিক্ষক বলেন, শিক্ষার্থীরা যাতে এই পথে যেতে না পারে এজন্য প্রথমে পরিবারকেই ভূমিকা রাখতে হবে। ছেলেমেয়েদের মৌলিক শিক্ষা প্রদানের পাশাপাশি তাদের নৈতিক ও প্রকৃত ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করতে হবে। পরিবার থেকে ছেলেমেয়েরা কোথায় যায়, কার সাথে মিশে, বাসায় কি করে এসব বিষয় নজরদারি করতে হবে। হঠাৎ করে ছেলেমেয়েদের আচরণ পরিবর্তন হচ্ছে কিনা তাও খেয়াল করতে হবে।
এছাড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত কাউন্সিলিং করা দরকার।
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও শিক্ষার্থীদেরও নিয়মিত কাউন্সিলিং করা যেতে পারে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চবির মনোবিজ্ঞান বিভাগের উদ্যোগে একটি ‘মেন্টাল হেল্থ সেন্টার’ খোলা হচ্ছে। যা কিছু দিনের মধ্যেই চালু হবে। এখান থেকে চবির শিক্ষার্থীরা সুবিধা নিতে পারবে।
Congratulations @imran2! You have completed some achievement on Steemit and have been rewarded with new badge(s) :
Award for the number of posts published
Click on any badge to view your own Board of Honor on SteemitBoard.
To support your work, I also upvoted your post!
For more information about SteemitBoard, click here
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP