এক সফল জীবনযোদ্ধার কাহিনী।
।
২৫ বছর বয়সী বেলজিয়ান পেশাদার ফুটবলার। আফ্রিকান বংশোদ্ভূত এ স্ট্রাইকার ক্লাব ক্যারিয়ারে বর্তমানে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে খেলছেন। বেলজিয়াম জাতীয় ফুটবল দলের একমাত্র বিজ্ঞাপন হয়ে অংশ নিয়েছেন ২০১৪ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ ও ২০১৬ সালের ইউরো কাপে। খেলছেন ২০১৮ সালের বিশ্বকাপও। একজন সফল ফুটবলার হয়ে ওঠার জন্য লুকাকু জীবনে যে অবিশ্বাস্য পথ পাড়ি দিয়েছেন তা বুঝি কল্পকাহিনীকেও হার মানায়। দৃঢ় মুঠিবদ্ধ সংকল্পসহায় বন্ধুর সে পথ পাড়ি দেয়ার গল্প শুনুন....
“সুনির্দিষ্টভাবে ঠিক ওই ক্ষণটাই আমি মনে করতে পারি, ঠিক যে ক্ষণে আমি বুঝতে পারলাম আমাদের পরিবারটা আসলে ভেসে যাচ্ছে। ওই সময়ে বাসার ফ্রিজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আমার মায়ের মুখ এবং তার মুখে লেগে থাকা ছাপ এখনও আমার চোখে লেগে আছে।
আমার বয়স তখন মাত্র ছয়। প্রতিদিন লাঞ্চ ব্রেকে স্কুল থেকে বাসায় আসি। লাঞ্চ মেন্যু কিন্তু নির্ধারিত। এমন কোনো দিন নেই যে, মা আমার জন্য টেবিলে ব্রেড এবং দুধ রাখতেন না। ওই ছোট বয়সে আমার ধারণা ছিলো, এটাই হয়তো স্বাভাবিক।
একদিনকার ঘটনা। অন্যান্য দিনের মতো সেদিনও লাঞ্চ ব্রেকে বাসায় আসলাম। ঘরে ঢুকেই কিচেনের দিকে হাঁটা ধরলাম। দূর থেকেই দেখতে পাচ্ছিলাম মাকে, আমার জন্য দুধ রেডি করছেন। হঠাৎ মনে হলো, মা যেনো দুধের সাথে কিছু একটা মেশাচ্ছেন। দুধের বোতলটা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে মা লাঞ্চ নিয়ে এলেন আমার কাছে। আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। অবশ্য মায়ের আচরণ দেখে মনে হচ্ছিলো, সবকিছুই যেনো স্বাভাবিক। হঠাৎ সবকিছুই জলের মতো পরিষ্কার হয়ে এলো আমার সামনে।
আমার মা দুধের সাথে পানি মেশাচ্ছিলেন। আমাদের কাছে পুরো সপ্তাহ চলার মতো দুধ ছিলো না। আবার দুধ কিনে নিয়ে আসার মতো পর্যাপ্ত টাকাও ছিলো না। আমরা একেবারে অভাবী ছিলাম। দরিদ্র না, তারচেয়েও অভাবী। সেই প্রথম আমার মনে হলো, আমরা আসলে ভেসে যাচ্ছি।
বাবা ছিলেন একজন পেশাদার ফুটবলার। কিন্তু আমি ওই সময়ের কথা বলছি, যখন তার ক্যারিয়ার একেবারে পড়তির দিকে। অর্থকড়ি যা আয় করেছিলেন তার সবই এখন যাওয়ার পথে। প্রথম যে জিনিসটা ঘর থেকে চলে গেলো সেটি হলো টিভি। টিভির সাথে সাথে ফুটবলও দূর হলো ঘর থেকে।
রাতে যখন বাসায় ফিরতাম দেখতাম বাড়ির সমস্ত লাইট নেভানো। বুঝতাম, ইলেক্ট্রিসিটিও নেই। এভাবে দুই কিংবা তিন সপ্তাহের জন্য অন্ধকারে থাকতে হতো আমাদের। গোসল নিতে গিয়ে দেখতাম গরম পানিও নেই। মা তড়িঘড়ি করে স্টোভে এক কেতলি পানি গরম করে দিতেন। আমি বাথরুমে দাঁড়িয়ে ছোট কাপে করে পানি নিয়ে সেই পানি দিয়ে গোসল সারতাম।
এক সময় মা পাড়ার দোকান থেকে বাকিতে ব্রেড কিনে আনা শুরু করলেন। দোকানদার আমাকে আর আমার পিচ্চি ভাইটাকে চিনতো। আমাদের ওপর দয়াপরবশ হয়েই কিনা ওই দোকানদার শুক্রবারে টাকা পরিশোধের শর্তে সোমবারে মায়ের হাতে এক টুকরো ব্রেড তুলে দিতো।
আমি ওই ছয় বছর বয়সেই জানলাম, জীবনযুদ্ধে আমরা সংগ্রাম করছি। কিন্তু যেদিন মাকে দুধের সাথে পানি মেশাতে দেখলাম সেদিন আমি বুঝলাম, আসলে সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। সেদিন আমি ‘সংগ্রাম’ শব্দটাকে পুরোপুরি উপলব্ধি করলাম। বুঝতে শিখলাম, আসলে এটাই আমাদের জীবন।
ওই দুপুরে আমি একটা কথাও বলিনি। এ নিয়ে মাকে কিছু জিজ্ঞাসাও করিনি। নিঃশব্দে খাওয়া শেষ করে উঠে গেলাম। কিন্তু ওই দিনই, ওই দুপুরেই আমি নিজের কাছে নিজে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলাম। আমি জেনে গেলাম, আমাকে আসলে কী করতে হবে এবং আমি কী করতে চলেছি। এটা অনেকটা এমন যেনো কেউ আমাকে একটা চড় মেরে নিশ্ছিদ্র ঘুম থেকে জাগিয়ে দিয়ে গেলো।
সংসারে আমি আমার মাকে ওই হতদরিদ্র অবস্থায় কখনোই দেখিনি এবং দেখতেও পারছিলাম না। না না না…
Congratulations @bladder! You have completed the following achievement on Steemit and have been rewarded with new badge(s) :
You got a First Reply
Click on the badge to view your Board of Honor.
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
To support your work, I also upvoted your post!
Do not miss the last post from @steemitboard:
SteemitBoard World Cup Contest - Quarter Finals - Day 2
Participate in the SteemitBoard World Cup Contest!
Collect World Cup badges and win free SBD
Support the Gold Sponsors of the contest: @good-karma and @lukestokes