রুপা হত্যার রায়ের পরও দৌড় থামেনি বাসাইলের শাহজানের !

in #dlive7 years ago

tangailtimes-12-2-18-11_jpg.jpg

মির্জা শাহজাহান। বয়স পঁয়ষট্টির কোটায়। গত বছরের ২৫ আগস্ট টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্ত বাসে ঢাকা আইডিয়াল ‘ল’ কলেজের ছাত্রী জাকিয়া সুলতানা রূপাকে গণধর্ষণের পর হত্যার খবরে চমকে উঠেন শাহজাহান। তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন এই জঘন্য ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে দৌড়ে জনমত সৃষ্টি করবেন।

মধুপুর থানায় মামলার পর আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর থেকে দৌড় শুরু করেন শাহজাহান। এরপর প্রতি বুধবার আদালত এলাকা থেকে শুরু করে রূপা হত্যার বিচার সম্বলিত ফেস্টুন নিয়ে শহরের বিভিন্ন এলাকায় দৌড়ান তিনি।

কখনো দৌড়ে কখনো বাই-সাইকেল নিয়ে শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বেড়ান। স্থানীয়রাও তার সঙ্গে সহমত প্রকাশ করেন। এরপর ৬ ডিসেম্বর একদল যুবক তার সঙ্গে দৌড়ে অংশ নেন। ১২ ফেব্রুয়ারি সোমবার রূপা হত্যার রায়ের আগেও আদালত চত্বরে দৌড়াতে দেখা যায় তাকে।

মির্জা শাহজাহান টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার একঢালা গ্রামের মৃত মির্জা হানিফ উদ্দিনে ছেলে। বর্তমানে তিনি টাঙ্গাইল শহরের থানাপাড়া এলাকায় বসবাস করছেন।

সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রূপা হত্যা মামলায় পাঁচ আসামির মধ্যে ছোঁয়া পরিবহনের হেলপার শামীম (২৬), আকরাম (৩৫), জাহাঙ্গীর (১৯), চালক হাবিবুরকে (৪৫) ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। অপর আসামি ওই পরিবহনের সুপারভাইজার সফর আলীকে (৫৫) সাত বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবুল মনসুর মিয়া। সেই সঙ্গে সফর আলীকে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। সে অর্থ নিহত রূপার পরিবারকে দেয়ারও নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এছাড়াও অপরাধ সংঘটনের কাজে ব্যবহৃত ছোঁয়া পরিবহন ( ঢাকা-মেট্রো-ব -১৪-৩৯৬৩) বাসটি ক্ষতিপূরণ হিসেবে নিহতের পরিবারকে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ঘটনার পর মাত্র ১৪ কর্মদিবসের মধ্যে মামলার রায় হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন মির্জা শাহজাহান। তবে এতেও তার দৌড় থামেনি। এ রায় কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত দৌড়াবেন বলেও জানান তিনি।

মির্জা শাহজাহান দ্রুত রায় কার্যকর করতে সরকারের কাছে জোর দাবি জানান। এছাড়াও তিনি দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে ধূমপানের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে দৌড়ে যাচ্ছেন। আমৃত্যু পর্যন্ত এধরনের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাবেন বলেও জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৫ আগস্ট বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে জাকিয়া সুলতানা রূপাকে চলন্ত বাসে গণধর্ষণ করে পরিবহন শ্রমিকরা। বাসেই তাকে হত্যার পর মধুপুর উপজেলায় পঁচিশ মাইল এলাকায় বনের মধ্যে রূপার মরদেহ ফেলে রেখে যায়। এলাকাবাসীর কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ ওই রাতেই অজ্ঞাত পরিচয় মহিলা হিসেবে তার মরদেহ উদ্ধার করে। পরদিন ময়নাতদন্ত শেষে রূপার মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় গোরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মধুপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে।

পত্রিকায় প্রকাশিত ছবি দেখে তার ভাই হাফিজুর রহমান মধুপুর থানায় গিয়ে ছবির ভিত্তিতে তাকে শনাক্ত করেন। গত ১৫ অক্টোবর এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা টাঙ্গাইল বিচারিক হাকিম আদালতে পাঁচ আসামির বিরূদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

অভিযোগপত্র দাখিলের পর দিন ১৬ অক্টোবর মামলাটি বিচারের জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বদলি করা হয়। গত ২৫ অক্টোবর আদালত এ অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন।

২৮ আগস্ট এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ময়মনসিংহ-বগুড়া সড়কের ছোঁয়া পরিবহনের হেলপার শামীম (২৬), আকরাম (৩৫) ও জাহাঙ্গীর (১৯) এবং চালক হাবিবুর (৪৫) ও সুপারভাইজার সফর আলীকে (৫৫) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা প্রত্যেকেই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। মামলার আসামিরা প্রত্যেকেই এখন টাঙ্গাইল কারাগারে রয়েছেন।

টাঙ্গাইলটাইমস