হুট করে ফ্রিজ নষ্ট হয়ে যাওয়াটা যে কোন গৃহিণীর জন্যই অত্যন্ত বিপর্যয়ের একটি মুহূর্ত। কেন? কারণ গৃহিণী মাত্রই নিজের ফ্রিজ ভরে রাখেন সংসারের নানান প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান। ফ্রিজ নষ্ট হয়ে যাওয়া মানে অনেকগুলো টাকার জিনিস একসাথে নষ্ট হয়ে যাবার সম্ভাবনা তৈরি। আজকাল নন-ফ্রস্ট ফ্রিজগুলো বন্ধ হয়ে যাবার পর বেশিক্ষণ কিন্তু ঠাণ্ডা ভাবটা ধরে রাখতে পারে না। ফলে ফ্রস্ট ফ্রিজের চাইতে অনেক দ্রুত সবকিছু নষ্ট হতে শুরু করে। অন্যদিকে এতগুলো খাবার তো একবারে খেয়ে ফেলা সম্ভব না, তাই না? পচে গিয়ে নষ্ট হবে মাছ-মাংস সব কিছু, তারপর ফেলে দেয়া ভিন্ন অন্য কোন পথই খোলা নেই...
ভুল! পথ কিন্তু খোলা আছে, কেবল আপনাকে জানতে হবে কী সেই পথ। চলুন, আজ বরং জেনে নিই হুট করে ফ্রিজটা নষ্ট হয়ে গেলে আতংকিত হবার বদলে বরং কী কী করতে পারেন আপনি।
১) ফ্রিজে আদা-রসুন বাটা রাখার কাজটা প্রায় সকল গৃহিণীই করেন এবং ফ্রিজ নষ্ট হয়ে গেলে এই আদা-রসুন বাটাই সবচাইতে আগে নষ্ট হয়। চিন্তা করবেন না, ফ্রিজে মাছ-মাংস থাকলে আদা-রসুন বাটা এখন আপনার কাজে লেগেই যাবে! ফ্রিজ থেকে বের করে সরাসরি গরমে বা চুলার ধারে রাখবেন না, যতটা সম্ভব ঠাণ্ডা স্থানে রাখুন। একটু বেশি সময় ভালো থাকবে।
২) প্রথমেই নিন মাছ, যা খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। মাছকে খুব ভালো করে লবণ দিয়ে ধুয়ে নিন। এবং লবণ-হলুদ ও সামান্য রসুন বাটা মাছে মেখে নিন। সাথে যোগ করুন সামান্য সাদা সিরকা। ১০ মিনিট পর গরম তেলে একদম মুচমুচে করে মাছ ভেজে নিন। ভালো মতন ঠাণ্ডা করে এয়ার টাইট বক্সে ভরে রেখে দিন। শীতের দিন হলে এই ভাজা মাছ ২/৩ দিন এভাবেই ভালো থাকবে। গরমের দিন হলে এক দিন পর শুকনো প্যানে মাছ দিয়ে ভালো করে গরম করে নিন। এই ভাজা মাছ গরম ভাতের সাথে খেতে পারবেন, ভুনা বা রান্না করেও খেতে পারবেন।
৩) লাল মাংস অনেক ভাবেই সংরক্ষন করে রাখা যায়। প্রথম অপশন হচ্ছে কষিয়ে ভুনা ভুনা করে রান্না করে ফেলুন। গরু বা খাসির মাংসের ভুনা তরকারি ৭/৮ দিন পর্যন্ত জ্বাল দিয়ে দিয়ে রেখে খাওয়া যায়। যদি জ্বাল দিতে না চান, তাহলে আছে নানান ব্যবস্থা। সবচাইতে সহজ উপায়টি হচ্ছে গরু/খাসির মাংসের শুঁটকি করে রাখা। মাংসকে সমস্ত মশলা অল্প করে দিয়ে ভালো করে মেখে নিন। বাড়তি যোগ করুন সরিষার তেল ও সামান্য সিরকা। মাংসের শুঁটকি তাজা মাংস দিয়ে করতে হয়। যেহেতু ফ্রিজে রাখা মাংস, তাই সিরকা ও সরিষার তেল মাংসকে ভালো রাখতে সহায়তা করবে। মশলা মাখা হলে তার বা গুনার সাথে গেঁথে কড়া রোদে শুকিয়ে নিন। রোদ না থাকলে সমস্যা নেই, কড়াইতে মাংসের চর্বি গলিয়ে বা সয়াবিন তেলের মাঝেই এই মাংসের টুকরো গুলো ভেজে নিন। পরের দিন আবার ভাজুন। এরপর থেকে একদিন পর পর ভেজে নিন যতদিন পর্যন্ত না সব পানি টেনে যায়। এরপর কৌটায় ভরে সংরক্ষন করুন। এই ভাজা মাংস গরম পানিতে ভিজিয়ে তারপর পাটায় ছেঁচে নিয়ে দোপেয়াজা বানিয়ে খেলে দারুণ সুস্বাদু হবে। নিয়মিত রোদে দিলে এক বছর পর্যন্ত রাখা যাবে।
৪) মুরগী, কবুতর বা হাঁসের ভুনা তরকারি ২/৩ দিন জ্বাল দিয়ে অনায়াসে খাওয়া যায়। ভুনা করতে না চাইলে আদা-রসুন, হলুদ, লবণ ও সিরকা মেখে ডুবো তেলে ভেজে নিন। ঠাণ্ডা করে এয়ার টাইট বক্সে রাখুন। রোজ একবার ভাজা দিয়ে ৩/৪ দিন রাখতে পারবেন। এই ভাজা মাংস রান্না করতে পারবেন, পাটায় ছেঁচে নিয়ে দোপেয়াজাও করতে পারবেন।
৫) দুধ জ্বাল দিয়ে দিয়েই রাখা যায় সহজে। তবে ফ্রিজে রাখা দুধ হলে জ্বাল দেয়ার সময় এক চিমটি লবণ যোগ করুন, সহজে নষ্ট হবে না।
৬) সবজি ও ফল ফ্রিজ থেকে বের করে ভালো করে কাপড় দিয়ে মুছে বাতাসে মেলে রাখুন। নাহলে চট করে নষ্ট হয়ে যাবে।
৭) সসেজ, নাগেটস এইসব মাংসে তৈরি ফ্রোজেন খাবার ডিপ ফ্রাই করে ফেলুন। তবে মাঝারি আঁচে অনেক সময় নিয়ে কড়া করে ভাজবেন, ফ্ল্যাশ ফ্রাই করবেন না। ২/৩ দিন ভালো থাকবে।
৮) চিজ/পনির/ মাখন/মারজারিন/ চকলেট ইত্যাদি ফ্রিজ ছাড়া চট করে নষ্ট হয়ে যায়। এগুলোকে পলিথিনে ভরে ভালো করে মুখ আটকে নিন। জিপ লক ব্যাগেও ভরতে পারেন। তারপর গামলা বা হাড়ি ভরে পানি নিয়ে সেটার মাঝে সম্পূর্ণ ডুবিয়ে ঠাণ্ডা স্থানে রাখুন। বেশ কয়েকদিন ভালো থাকবে। ২ দিন পর পর পানি বদলে দেবেন।
৯) ডিমও পানিতে ডুবিয়ে রাখলে অনেকদিন ভালো থাকবে।
১০) কেক বা মিষ্টি জাতীয় বেকারি আইটেম ভালো রাখতে চান? একটি এয়ার টাইট প্লাস্টিক বক্স খুব ভালো করে ভিনেগার দিয়ে মুছে নিন। এরপর এটার মাঝে কেক, পাউরুটি সহ যে কোন বেকারি আইটেম রেখে দিন। নষ্ট হবে না একটুও। আমাদের দেশীয় মিষ্টিও একইভাবে সংরক্ষণ করতে পারেন।
সবশেষে বলি, ফ্রিজ নষ্ট হয়ে গেলে আতংকিত হবার কিছু নেই। হ্যাঁ, আজকাল আধুনিক জীবনযাপনে ফ্রিজ জিনিসটা ভীষণ জরুরী বটে। কিন্তু মনে রাখবেন, এই তো কিছু বছর আগেও আমাদের দাদী-নানীরা এই ফ্রিজ ছাড়াই দিব্যি সংসার করে গিয়েছে। আর তাই, একটু বুদ্ধি করলে আপনিও পারবেন কটা দিন ফ্রিজ ছাড়াই চলতে.
Sort: Trending