. আকাশে ঘুড়ির ঝাঁক ছেলেটাকে ডাকছে ...মুক্তির ঘুড়ি তাকে খবর পাঠাচ্ছে !’ এভাবেই হারিয়ে যাওয়া শৈশবকে ফিরিয়ে দিতে নীল আকাশে পেটকাটি -চাঁদিয়াল -মোমবাতি -বগ্গার মতো ঝাঁকে ঝাঁকে ঘুড়ির প্যাঁচের খেলা৷ বাতাসের ধারে ভর করে খোলা হাতে লাটাই -এ মাঞ্জা সুতো ছেড়ে ঘুড়ি আরও আরও উপরে ওড়ানোর দেদার মজা৷ প্রতিপক্ষের ঘুড়ি কাটতে পারলে গলা ছেড়ে চিত্কার ‘ভোকাট্টা ’৷
আজ রবিবার বিশ্বকর্মা পুজোর দিন শিশুদের হাতে ঘুড়ি -লাটাই তুলে দিয়েই এমনতর ঘুড়ি উত্সবেরই আয়োজন করছে দক্ষিণ কলকাতার লেক রোডের সমাজসেবী সঙ্ঘ৷ পুজোর আর বাকি মাত্র ৯ দিন৷ সমাজসেবী সঙ্ঘের পুজো মন্ডপ তৈরির কাজও প্রায় শেষের পর্যায়ে৷ ওই মন্ডপের সামনে বা হাওয়ার গতিপ্রকৃতির নির্ভর করে পাড়ার কোনও কোনও বাড়ির ছাদে উঠেই আজ কচিকাঁচারা মাতবে ঘুড়ি ওড়ানোর খেলায়৷ এবার এই পুজোর থিম সবুজের অভিযান৷ মূলত কেরিয়ারের বাঘবন্দি খেলায় নিতান্ত শ্বাসরুদ্ধ শৈশবের কোণঠাসা হালই সামনে আনতে চাইছে তারা৷ পুজো কমিটির সাধারণ সম্পাদক অরিজিত্ মৈত্র বলেন , ‘শারদোত্সবের প্রাক মুহূর্তে আমরা বিশ্বকর্মা পুজোর পার্বনটা ভেবেচিন্তেই বেছে নিয়েছি৷ এক সময় ঘুড়ি ওড়ানোটা ছিল ছেলেপুলেদের কাছে বিরাট এক মজার খেলা৷ ভালো ঘুড়ি জোগাড় করা , মাঞ্জা দিয়ে ঘুড়ির সুতো শান দিয়ে প্যাঁচের লড়াইতে অন্যদের টেক্কা দেওয়ার ঝোঁকটা শৈশব আর কৈশোরের বড় অংশ জুড়ে থাকত৷ আর থাকত ঘুড়ি না কিনতে পারার দুঃখ ভুলতে ভোকাট্টা ঘুড়ির পেছনে চরকিপাক কাটা৷ ঘুড়ি ওড়ানোর সবচেয়ে বড় পরবটাই ছিল বিশ্বকর্মা পুজো৷ কবির সুমনের গানের মতোই ঝাঁকে ঝাঁকে ঘুড়িতে আকাশ প্রায় ঢেকে যেত৷
সেসব দিন আর নেই৷ পড়া -টিউশনের চাপ , ফ্ল্যাটবাড়ির বদ্ধ পরিবেশে মানুষ হওয়া একটি শিশুর হাতের মুঠোয় আর নেই খোলা ছাদ বা সবুজ মাঠের হাতছানি৷ সব মিলিয়ে , ঘুড়ি ওড়ানোর সংস্কৃতিটা আজকের বাচ্চাদের কাছে এক অপরিচিত অধ্যায়৷ ’ শৈশবের এই সীমাবদ্ধতার কথা মাথায় রেখেই সমাজসেবীর এবারের পুজো মণ্ডপের উপকরণ জং ধরা বাতিল লোহার টুকরো৷ উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন , চলতি পরিস্থিতিতে শিশুদের কেরিয়ার গড়ার কড়া রুটিনে বাঁধা জীবনে খানিক মুক্তির স্বাদ আনতেই ঘুড়ি উত্সবের আয়োজন৷ অরিজিতের কথায় , ‘আমরা বাচ্চাদের হাতে আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘুড়ি -লাটাই তুলে দিয়েই দায় মেটাচ্ছি না৷ যারা ভালো ঘুড়ি ওড়াতে পারে , তাদের নিয়ে চিন্তাই নেই৷ এমন শিশু কিশোর আছে , যারা ঘুড়ি ওড়াতেই জানে না৷ আমরা ঘুড়ি উড়িয়ে দিয়ে তাদের হাতে সুতো -লাটাই ধরাব , চেষ্টা করব বাচ্চাগুলিকে ঘুড়ি ওড়ানো শেখাতে , বলব লাটাইয়ে মনের আনন্দে সুতো ছাড়৷ ঘুচে যাক আকাশ আর মাটির মধ্যে দূরত্ব৷ আর যে হারে নীল তিমির মতো ডিজিটাল মাদকের নেশা ছড়াচ্ছে , তার তো কিছু না কিছু অ্যান্টিডোট বা প্রতিষেধক দরকার৷ ’ সব মিলিয়ে , কবির সুমনের গানের সুরে সুর মিলিয়েই আজ লেক রোডে ‘বয়স বারো কি তেরো , বড়জোর চোদ্দো ’-দের হাতযশে পেটকাটি -চাঁদিয়ালের আকাশ জয়ের অভিযান৷