২৩ তারিখে একটু আকটু শুনেছিলাম যে একটা ঘুর্ণিঝড় আসতেছে আমাদের দিকে, তেমন একটা ভাবিনি তখন। এর আগেও বেশ কয়েকটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের দিকে আসতে গিয়েও নানা ভাবে রক্ষা পেয়েছি কিংবা অল্পতেই সেরে গিয়েছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আমি বিপদসীমার বাইরের একটি জেলায় থাকি সেজন্য তেমন মাথা ব্যাথা হয়নি।
২৪ তারিখ সকাল,
বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। জানালা দিয়ে বেশ আরামদায়ক বাতাস আসছে, আম্মু সকালে জানালাগুলো খুলে দিয়ে যায়। ভাবতেছিলাম যে কি জোশ একটা আবহাওয়া, দারুণ আরেকটু ঘুমানো যাক৷ আমি এইদিকে যখন গায়ে কাথা মুড়ি দিয়ে একটা জম্পেশ ঘুমের কথা ভাবছি তখন নিশ্চয় অন্যদিকের ঘুর্ণিঝড়ের কারণে মানুষের ঘুমের চিন্তা প্রায় হারাম হয়ে গিয়েছে। সবে মাত্র শুরু। ঘুম বাদ দিয়ে উঠলাম কেননা বাকির খাতায় একটা পরীক্ষা আছে যেটা আগামীকাল দিতে হবে এবং পরীক্ষার আগের দিন হচ্ছে পড়াশুনার মূখ্য সময়। সুতরাং এই মেঘলা দিনে আরাম করে পড়তে বসলাম। হঠাৎ দুপুরের দিকে খবর আসলো ঘূর্নিঝড়ে কারণে পরীক্ষা স্থগিত, আমার পড়ার গতি সেখানেই হোচট খেয়ে বসলো। তখনও এইদিকে শুধুমাত্র গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।
ধীরে ধীরে বিদ্যুৎ তার খেলা শুরু করলেন, এখন আছে তো একটু পর নেই। আবার আসে আবার নেই। লুকুচুরি খেলতে খেলতে সন্ধ্যার পর যে একদমই হারিয়ে গিয়েছেন তিনি। এখনও আমার এসব কিছুর মূলে যে ঘুর্ণিঝড় তা সর্ম্পকে তেমন খেয়াল নেই, সোশ্যাল মিডিয়ায় যাওয়া হয়নি সেজন্য হয়তোবা। গেলাম ফেসবুকে, প্রথমেই নজরে এলো পাশের এলাকায় একটা ট্রান্সমিটার নষ্ট, ঢাকায় ট্রেন লাইন চ্যুত, উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবের চিত্র। হয়তো এগুলো আমার উপলব্ধির জন্য কম ছিল তাই আমার নিজ জেলায় বৃষ্টি আর বাতাসের গতিবেগ বাড়তেই লাগলো, খবর পেলাম ঘূর্নিঝড়ের গতিপথে এবার আমারাও আছি।
রাত ১২ টা পেরিয়ে, অর্থাৎ ২৫ তারিখ শুরু,
বিদ্যুৎ নেই, একটানা এতক্ষণ খুব অসহ্য লাগছে। ঘুমানোর জন্য শুয়ে গেলাম। কিন্তু এখন শুরু মূল বিষয়। চারদিকে যখন সবাই নিশ্চুপ তখন বাইরের শু শু আওয়াজ, এত জোরে জোরে বাতাসের আওয়াজ হচ্ছে আমার মনে হচ্ছে বাতাস চিৎকার করে কিছু বলতে চাচ্ছে, এর আগে কখনো এমনটা অনুভব হয়নি আমার। এইযে এভাবে প্রায় ২ টার উপর বেজে চলছে, ঘুম আসেনি। অন্যদিন থেকে আজ আলাদা, আজকে শুধু ভাবছি আমার নিজের অবস্থান, চার দেয়ালের পাকাবাড়ির ভেতর থেকেও এই বাতাসের শব্দে কেমন যেন একটা ভয় পাচ্ছি, তাহলে যাদের মাথার উপর ছাদ নেই তাদের কি অবস্থা, আমার এলাকা বাদ দিলাম, যারা উপকূলীয় অঞ্চলে আছে তাদের কি অবস্থা তা কল্পনাও করতে পারছি না। এতক্ষণ যাবত মাথায় শুধু এগুলোই ঘুরপাক খাচ্ছে। এই শু শু বাতাসের তীব্র আওয়াজ, একটু পর পর মেইন গেইটের ধাপাস শব্দ, জানালা গুলোর কেপে উঠা আজ ঘুমোতে দিবেনা। ফোনের চার্জ টুকু জমা করে রেখেছিলাম, ঘুম আসছে না তাই লিখতে চেষ্টা করছি।
আমি রাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় এই মেঘলা দিনে খিচুড়ি খাওয়ার কিছু পোস্ট দেখেছি, লোভনীয় একটা ব্যাপার। এমনকি আমি বাসায় বলেও ছিলাম, এখন নিজের মধ্যে কেমন যেন একটা অপরাধবোধ কাজ করছে। একটু সুবিধাজনক অবস্থানে আছি বিধায় এমন আমেজ কিংবা সখের বিষয়টা মানায় না, মেঘলা দিন আরো আসবে কিন্তু আজকের মতো শোচনীয় নয় নিশ্চয়ই, তখন এসব আহ্লাদ মেটানো যাবে উৎসাহের সাথে।
তান্ডবের কিছু চিত্র দেখেছি এবং এর কিছুটা উপলব্ধিও করতে পারছি বাইরের এই বাতাসের আওয়াজে। হঠাৎ হঠাৎ এত বিকট ভাবে শু শু আওয়াজ হচ্ছে সত্যিই মনে হচ্ছে যে বাতাস চিৎকার করে যাচ্ছে। আল্লাহ সহায় হোক সবার প্রতি, সবাইকে হেফাজত রাখুক।