থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে চতুর্থ বার্ষিক ‘হুয়াওয়ে এশিয়া-প্যাসিফিক ইনোভেশন ডে’ সম্মেলনে ডিজটাল এশিয়া প্যাসেফিক অঞ্চল গড়তে নতুন উদ্ভাবনের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ডিজিটাল ইকোসিস্টেমের জন্য ৮১ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
আজ বুধবার হুয়াওয়ে টেকনোলজিস এবং থাইল্যান্ডের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের যৌথ আয়োজনে এ অনুষ্ঠানের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো ‘ডিজিটাল এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য উদ্ভাবন’। আর এর সাথে সঙ্গতি রেখে ব্যবহার করা হয়েছে হাতির সাথে গরুর ইন্টারনেট সংযোগের প্রতীকী ছবি। বাস্তবে এ দুই প্রাণীর মধ্যে এটা সম্ভব না হলেও মানুষের মধ্যে ডিজিটাল বৈষম্য যে অচিরেই ঘুচতে চলেছে তা এই ছবিতে বোঝানো হয়েছে।
সারা বিশ্ব থেকে মোট ৩০০ জন সরকারি প্রতিনিধি ও প্রযুক্তি খাত বিশেষজ্ঞরা ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেন। বাংলাদেশ থেকে উপস্থিত ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, হুয়াওয়ে বড় মাপের একটি গ্লোবাল আইসিটি কম্পানি। ওয়ার্ল্ড জিএসএমএ সম্মেলনে এই কম্পানির কার্যক্রম সম্পর্কে উপস্থাপনা দেখেছি। এরা ৫জি নিয়ে বড় মাপের কাজ করছে। বাংলাদেশে আমাদের টার্গেট হচ্ছে ২০২১ সালে ৫জি সেবা চালু করা। দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার সাথে সঙ্গতি রেখে এই সর্বাধুনিক সেবা চালু করা আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের প্রথম দিনে অন্যান্যরা ডিজিটাল অর্থনীতির ভবিষ্যৎ, কীভাবে ডিজিটাল অবকাঠামো মানুষের জীবনকে সমৃদ্ধ করে ও নতুন ব্যবস্থাকে ত্বরান্বিত করে, নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন এবং সফলতার জন্য একটি ডিজিটাল ইকোসিস্টেম তৈরি করা ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলেন।
থাইল্যান্ডের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ড. সমকিদ জাটুসরিপিটাক অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য প্রদান করেন। বক্তৃতায় তিনি থাইল্যান্ডের ‘গোয়িং ডিজিটাল’ স্ট্র্যাটেজির কথা তুলে ধরেন, যা দেশটির ডিজিটাল রূপান্তরে মূল ভূমিকা পালন করছে এবং থাইল্যান্ডের অর্থনীতিকে আধুনিকীকরণ করছে। তিনি থাইল্যান্ডে ডিজিটাল ইনোভেশনের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে থাই সরকারের প্রতিশ্রুতি পুর্নব্যক্ত করেন এবং দেশটির আইসিটি খাতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ কন্ট্রিবিউটার হিসেবে হুয়াওয়ের ভূমিকার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ‘আমি থাইল্যান্ড সরকার এবং হুয়াওয়ের আরো গভীর সম্পর্ক দেখতে চাই।’এ ছাড়াও তিনি জানান, থ্যাইল্যান্ড ২০২০ সালের আগেই ৫জির কথা ভাবছে।
থাইল্যান্ডের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী ড. সুভিত মায়েসিন্সসহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর প্রতিনিধিরাও এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে ডিজিটাল ইকোসিস্টেমের গুরুত্ব তুলে ধরে হুয়াওয়ের রোটেটিং চেয়ারম্যান গুও পিং বলেন, ‘এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের অনেক দেশ অর্থনীতিতে ডিজিটাল রূপান্তর শুরু করেছে। কিন্তু প্রবৃদ্ধিটা তেমন দৃশ্যমান নয়। ফলে দিন দিন উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতির মধ্যে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। আমরা একটি ম্যাথু প্রভাবের উত্থান দেখতে পাচ্ছি, যেখানে কম উন্নত দেশগুলোর চেয়ে ডিজিটালভাবে উন্নত অর্থনীতির দেশগুলো তাদের অবকাঠামো থেকে বেশি সুফল পায়। যাইহোক, আমরা ডিজিটাল প্রক্রিয়া গড়ে তুলতে যৌথভাবে কাজ করতে চাই।’
অনুষ্ঠানে থাইল্যান্ড ন্যাশনাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ডেভলপমেন্ট এজেন্সি এবং ন্যাশনাল ইনোভেশন এজেন্সি যৌথভাবে হুয়াওয়ে টেকনোলজিসের (থাইল্যান্ড) সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই করে। চুক্তির আওতায় প্রতিষ্ঠানগুলো যৌথভাবে কয়েকটি গবেষণা এবং উদ্ভাবন উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করবে। গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণকারী একটি দেশের ডিজিটাল রূপান্তরে সরকারের ভূমিকা ও অধিক কার্যকরী কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন।
হুয়াওয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের প্রেসিডেন্ট জেমস উ এই অঞ্চলের জন্য হুয়াওয়ের ‘ডেভেলপার এনাবলমেন্ট প্ল্যান’ উন্মোচন করেন। সক্রিয়করণ পরিকল্পনা অঞ্চলের ডিজিটাল অর্থনীতি এবং বাস্তুতন্ত্র তৈরি সমর্থন করে।
পরবর্তী তিন বছরে হুয়াওয়ে ‘ওপেনল্যাবস’ তৈরিতে ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে যা ক্লাউড ডেভেলপারদের দক্ষ করে তুলবে এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আইসিটি প্রতিভা গড়ে তুলবে। জেমস উ বলেন, ‘হুয়াওয়ে ডেভেলপারদের দক্ষতা এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া তরুণ প্রতিভা বিকাশের দিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখে। আমাদের ৩০ বছরেরও বেশি আইসিটি দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা আছে। এপিআই এবং ডেভেলপমেন্ট প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আমরা আমাদের আঞ্চলিক ডেভেলপমেন্ট পার্টনারদের কাছে আমাদের দক্ষতাগুলো উন্মোচন করবো। শিল্প ডিজিটাইজেশনের জন্য সুনির্দিষ্ট সমাধান তৈরি এবং নিজস্ব ব্যবসা বাড়াতে ডেভেলপারদের জন্য এটি একটি বিশাল সুযোগ।’
এ ছাড়াও জেমস উ ‘হুয়াওয়ে ডেভেলপার চ্যালেঞ্জ ২০১৮’ ঘোষণা করেন, যা আনুষ্ঠানিকভাবে ১১ জুন থেকে চালু হবে। হুয়াওয়ে স্থানীয় ডেভেলপারদের নির্দেশনা প্রদানের জন্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় একটি বিশেষ প্রতিযোগিতার আয়োজন করবে। উপরন্তু, ‘হুয়াওয়ে ক্লাউড’ উদ্ভাবনকারী ডেভেলপারদের হুয়াওয়ে পৃষ্ঠপোষকতা করবে এবং নির্ধারিত শর্তসমূহ পূরণ করলে দেড় লাখ মার্কিন ডলার পর্যন্ত একটি পুরস্কার প্রদান করবে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়,‘অর্থনীতি ও সমাজের ওপর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রভাব’ বিষয়ে হুয়াওয়ে ও লন্ডন স্কুল অব ইকোনোমিকস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স (এলএসই) যৌথভাবে গবেষণা শুরু করেছে। ডিজিটাল ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে অনেক বক্তা তাদের আইডিয়া শেয়ার করতে অনুষ্ঠানে অংশ নেন। বিশেষ করে তারা ইন্ডাস্ট্রিতে ডিজিটাল রূপান্তর, এআই ইউনিকন এবং কিভাবে আইসিটি ভবিষ্যত প্রজন্মকে উন্নয়নে সক্রিয় করবে সেসব পলিসি এবং রেগুলেশন নিয়ে কথা বলেন।
Hi! I am a robot. I just upvoted you! I found similar content that readers might be interested in:
https://www.jcpenney.com/